সর্বোত্তম পেতে গিয়ে উত্তমকে হারালে কি হবে দেশের ভবিষ্যৎ? দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সতর্ক বার্তা


সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টায় উত্তম অর্জন হারিয়ে না ফেলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সংলাপের উদ্দেশ্য ও প্রথম দিনের আলোচনা
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী এ সংলাপের উদ্দেশ্য হলো দেশজুড়ে ঐক্যের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করা। সংলাপের প্রথম দিনেই ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
সংস্কার নিয়ে দেবপ্রিয়ের বক্তব্য
দেবপ্রিয় বলেন, “সংস্কারমুখী মানুষদের খাদ্য, চাকরি, বা আইনশৃঙ্খলার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত না করে তাঁদের বিপথে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের উত্তম অর্জনগুলোকে অবহেলা করা চলবে না। তা না হলে আমরা বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধান না করেই অগ্রগতির উচ্চতম স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করব।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, নদীভাঙনের শিকার মানুষ, আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়, নারী-পুরুষের বৈষম্য, ধর্মীয় বিভেদ এবং লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে যারা বৈষম্যের শিকার—এই সব মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”
নির্ভরযোগ্য ভিত্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়
দেবপ্রিয়ের মতে, কাঠামোগত প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয় না। তিনি বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান—এই বিষয়গুলো সংস্কারের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। ভিত ঠিক না থাকলে উপরিকাঠামোর সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”
সবার জন্য সমান সুযোগের প্রয়োজনীয়তা
সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ মানুষের জন্য এমন কোনো সুবিধা না থাকা নিয়ে দেবপ্রিয় প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য ভাতার প্রচলন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। অথচ আসল ক্ষমতায়ন হলো রুটি-রুজির ক্ষমতায়ন।”
শ্বেতপত্রের মাধ্যমে লুণ্ঠনের মাত্রা উন্মোচন
শ্বেতপত্র তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দেবপ্রিয় বলেন, “সময়মতো শ্বেতপত্র তৈরি করতে পেরে আমরা গর্বিত। এটি প্রকাশ করেছে অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের ভয়ংকর চিত্র, যা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।”
উপসংহার
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মন্তব্য দেশের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জনের পথে উত্তম অর্জনগুলো হারিয়ে গেলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ কারণে দেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে ঐক্য, সংস্কার, এবং মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
Tidak ada komentar yang ditemukan