close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সংসদ নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা ও সময়মতো প্রস্তুতির বিষয়ে উঠেছে অসংখ্য প্রশ্ন। রাজনৈতিক মতবিরোধ, প্রশাসনিক অনাস্থা ও সংস্কার বাস্তবায়নের ধীরগতিতে জর্জরি..

বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চে জাতীয় নির্বাচন যেন এক অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমেছে আলোড়ন। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো হতাশা প্রকাশ করলেও, সময়সীমা মেনে নিয়ে নির্বাচনমুখী আলোচনায় তারা যুক্ত হতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই নির্বাচন আদৌ কি হবে গ্রহণযোগ্য, উৎসবমুখর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক?

এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা অন্তত দশটি বড় চ্যালেঞ্জ, যেগুলোর সমাধান না হলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

 

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বললেও, বাস্তবতা হলো—তার ঘোষিত সময়সীমা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, এই সময় নির্ধারণে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। দুটি উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করে বিএনপি এখনো অনড়।

 

বিশ্লেষকদের মতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' দরকার, সেটা তৈরিতে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দেহ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করা।”

 

সরকার এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি দাবি করছে, প্রশাসন দলীয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় কীভাবে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে—তা নিয়ে জনগণ চিন্তিত।

 

নির্বাচন কমিশন এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে পারেনি। কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ যদিও দাবি করছেন, “ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব,” কিন্তু বাস্তবতা হলো—তালিকা, কেন্দ্র, সীমানা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার অনেক কাজ বাকি।

 

এখনো নিশ্চিত নয়, সীমানা নির্ধারণ হবে পুরনো আইন অনুযায়ী না নতুন আইনে। নতুন আইন হলে এত অল্প সময়ে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। এটি একটি স্পর্শকাতর ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গত ১১ মাসে কতটা বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে? বিশেষ করে 'জুলাই সনদ'-এর বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কাজ এখনও শুরু হয়নি বলেই অভিযোগ অনেকের।

 

বিএনপির অভিযোগ, “সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।” একাধিক দলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যার নিষ্পত্তি না হলে নির্বাচন কমিশন বা পুলিশ কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে—তা নিয়েও সন্দেহ।

 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকার কারণে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “৩০-৪০% ভোট যার সমর্থনে সে দল নির্বাচনের বাইরে—এটা গ্রহণযোগ্য হবে কীভাবে?” অতীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলেও, জনমনে সেটি গ্রহণযোগ্য হয়নি।

 

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে শুধু দল নয়, সব ভোটারের অংশগ্রহণ বুঝি।” তাহলে এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে নির্বাচন করলে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও, দেশের মানুষ কি তা মেনে নেবে?

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, “ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ ১০টি কাজ থাকে ইসির—কিন্তু তারা শুধু হালনাগাদ শুরু করেছে, আর কিছুই করেনি।” মাত্র ১০ মাসে এই কাজ শেষ করা চরম চ্যালেঞ্জ।

 

বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার চাইলে পারে একটি অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর ও ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দিতে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, চ্যালেঞ্জগুলো গুরুতর এবং গভীর। পক্ষপাতের ছায়া দূর করা, জনগণের আস্থা ফেরানো ও রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জন করাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল পরীক্ষার জায়গা।

Nenhum comentário encontrado