বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দেশের সংবিধানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের’ মতো ধর্মীয় ভিত্তিক পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপক দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ষষ্ঠ দিনের আলোচনার মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এ দাবি তুলে ধরেন।
ডা. তাহের জানান, ‘সিপিবি ও কয়েকটি বাম দলকে ছাড়া অন্যান্য অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করেছে। আমরা মনে করি, দেশের সংবিধানে এমন ধর্মীয় উপাদান যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া জামায়াত নেতা বলেন, দেশের সংবিধানে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের প্রক্রিয়া সংস্কারের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে একটি নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন এই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব রক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, যা পূর্বের মতো প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় সীমাবদ্ধ থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের দুই কক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি থাকবেন। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হবে।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অতীতে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে নানারকম অনিয়ম ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সচিবালয়ের কিছু অংশে এখনও সেই শাসনপ্রণালীর দোসররা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতার প্রয়োগ প্রয়োজন।
ডা. তাহেরের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘এই সংস্কার না হলে দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দূর হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতামত বিনিময় করছেন। বিশেষ করে দেশের সংবিধানে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা উন্নয়নের বিষয়ে ব্যাপক মতবিরোধ থাকলেও ধর্মীয় মানদণ্ড সংযোজনের বিষয়ে বেশিরভাগ দল সমর্থন জানিয়েছে।
বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় কিভাবে করা যাবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানে ধর্মীয় রূপায়ণের প্রস্তাব সমাজের বড় অংশের মনোবৃত্তি প্রতিফলিত করলেও এটি কিভাবে সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে, তা সময়ের বড় পরীক্ষা। একই সঙ্গে সাংবিধানিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার ফলে সরকারের ক্ষমতা ভারসাম্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চরম গরমালোচনা শুরু হয়েছে।
এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এক জায়গায় বসে সংবিধান সংস্কারের নানা দিক নিয়ে মত বিনিময় করায় জনগণের মধ্যে আশা তৈরি হয়েছে যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাংবিধানিক স্বচ্ছতা বাড়বে।
তবে এই প্রস্তাবগুলো সংসদে পাশ হওয়ার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য ও ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন, যা কিভাবে গড়ে উঠবে সেটাই সময়ের বড় প্রশ্ন।
এই আলোচনার পরবর্তী ধাপে জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আরও বিস্তারিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের মতামতগুলো সংগ্রহ করে সরকারকে সুপারিশ করবে।