close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সম্প্রচার আইন সংশোধনের উদ্যোগ: কঠোরতা কমিয়েও শঙ্কা কাটছে না গণমাধ্যম কর্মীদের..

Hafijur Rahman avatar   
Hafijur Rahman
বাংলাদেশ সরকার বিতর্কিত সম্প্রচার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, শাস্তি কমিয়ে নতুন খসড়া তৈরি করেছে। তবে, গণমাধ্যম কর্মী ও স্বচ্ছতা সমর্থকরা আইনের অস্পষ্টতা এবং অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন। তারা মনে করে..

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিতর্কিত সম্প্রচার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। পূর্বের আইনে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও, প্রস্তাবিত নতুন অধ্যাদেশে কারাদণ্ড ও জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। তবে, এই পরিবর্তন সত্ত্বেও গণমাধ্যম কর্মী ও স্বচ্ছতা সমর্থকরা আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশোধিত অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ সাত বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং জরিমানার পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়াটি গত ২১ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে এবং অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে আরও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ফারাহ শাম্মী।

সরকারের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি সম্প্রচার আইন গণমাধ্যম কর্মীদের তীব্র সমালোচনার মুখে স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই আইনের কঠোর ধারাগুলো নিয়ে সাংবাদিক ও বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ ছিল।

তবে, নতুন অধ্যাদেশের পরও উদ্বেগ কমেনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, খসড়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অস্পষ্ট রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে বিধির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে এবং এর ফলে স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে এই আইন প্রয়োগের সুযোগ থাকায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

वरिष्ठ पत्रकार (সিনিয়র সাংবাদিক) এবং মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যা অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হবে। তার মতে, বর্তমানে অনলাইন ও সম্প্রচার মাধ্যম একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছে।

এই আইনের প্রেক্ষাপট ২০১৪ সালে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের সময় থেকে শুরু হয়, যা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। এরপর সরকার আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৬ সালে খসড়া আইন প্রকাশ করা হলেও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পরেও গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মুখে তা আর সংসদে উত্থাপন করা হয়নি।

সংশোধিত অধ্যাদেশে বেশ কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন কোনো গোপন সামরিক বা বেসামরিক তথ্য প্রকাশ করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এছাড়া, রাষ্ট্রবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী কনটেন্ট প্রচারের জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে এবং লাইসেন্স ছাড়া সম্প্রচার কার্যক্রম চালালে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অনুমোদনবিহীন বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রেও কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান এই আইনের অস্পষ্ট সংজ্ঞার সমালোচনা করে বলেন, "স্পষ্ট সংজ্ঞা ছাড়া, এগুলো গণমাধ্যমকে সেন্সর করতে এবং সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে অপব্যবহার করা হতে পারে।" কামাল আহমেদও 'জাতীয় বিষয়' বা 'জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারে'  এই ধরনের অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রস্তাবিত আইনে একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, যারা সম্প্রচার নীতিমালা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তির সুপারিশ করবে। এছাড়া, অপরাধের বিচারের জন্য সম্প্রচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথাও বলা হয়েছে। তবে, অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমতির বাধ্যবাধকতা এবং তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লাইসেন্সিং এবং মালিকানার ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। সকল সম্প্রচার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে লাইসেন্স বা নিবন্ধন করতে হবে। মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কামাল আহমেদ লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় মিডিয়া কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন।

সব মিলিয়ে, সরকার সম্প্রচার আইনকে কিছুটা নমনীয় করার চেষ্টা করলেও, এর প্রয়োগ এবং অস্পষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও সুশীল সমাজের মধ্যে এখনও যথেষ্ট উদ্বেগ বিদ্যমান। এখন দেখার বিষয়, অংশীজনদের মতামত গ্রহণের পর সরকার এই আইনের চূড়ান্ত রূপ কেমন দেয়।

Tidak ada komentar yang ditemukan