বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নীরবতা যেন এক ধরনের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক শক্তি। চুপ থাকা, মুখ না খোলা এবং নিজের অবস্থান প্রকাশ না করে চলাই যেন অনেকের কাছে নিরাপদ পথ। মানুষের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যে যত চুপ থাকে, তার বিরোধও তত কম হয়। আর যে অধিকার দাবি করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাকেই সমাজ অনেক সময় “বিরোধী” বা “সমস্যার উৎস” হিসেবে চিহ্নিত করে।
বহুদিন ধরেই সমাজে প্রচলিত—“বোবার কোনো শত্রু নেই।” এই কথাটি বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজে পায় কারণ অনেকে বিশ্বাস করেন, কথা বললেই সমালোচনা বাড়ে, আর সমালোচনা এড়াতে নীরবতাই সবচেয়ে সহজ উপায়। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে নীরবতাকে নিজের সুরক্ষা হিসেবে বেছে নেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—যখন সমাজ অন্যায়, বৈষম্য বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তখন সেই নীরবতা কি সত্যিই কার্যকর? মানুষের নিজের অধিকার, মর্যাদা বা কষ্টের কথা যদি কেউ বলতেই না পারে, তাহলে সেই নীরবতার মূল্য কে দেবে? কেন অধিকার দাবি করলেই শত্রু জন্মায়? সমাজের এই অসুস্থ প্রতিক্রিয়ার উত্তর অনেকের কাছে অজানা।
, আমাদের সামাজিক কাঠামোতে একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিকতা রয়ে গেছে—নীরবতা মানেই শান্তি, কথা বলা মানেই বিপদ। সমাজ মানুষকে শেখায়,
“চুপ থাকো—তাহলেই ভালো থাকবে।”
“নিঃশব্দ থাকো—তাহলেই তোমার শত্রু জন্মাবে না।”
এই অদৃশ্য নিয়ম মানুষের ভেতরে ভয় তৈরি করে। অনেকেই মনে করেন, কণ্ঠ তুললেই সমস্যা বাড়বে, তাই প্রয়োজনীয় সময়েও তারা চুপ থাকেন। কিন্তু এই নিঃশব্দ সংস্কৃতি দীর্ঘমেয়াদে মানুষের অধিকারচেতনা, আত্মবিশ্বাস এমনকি মানসিক স্বাধীনতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন একটি পরিবেশ যেখানে মানুষ কথা বলতে ভয় পায়, সেটি কখনোই সুস্থ সমাজ গঠন করতে পারে না। নীরবতা কখনো নিরাপত্তা দিতে পারে, কিন্তু অধিকারবোধকে চিরকাল চাপা রাখতে পারে না।
সবশেষে তাই প্রশ্ন উঠে আসে—মানুষ কি নিরাপত্তার জন্য সারাজীবন চুপ থাকবে?
নাকি সমাজকে পরিবর্তন করে মানুষের কণ্ঠকে তার স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে
গ্রহণ করতে হবে?



















