রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের রাজপথ যেন মুহূর্তেই রূপ নিয়েছিল প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্মে। শুক্রবার (৯ মে) দুপুর ৩টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ডাকে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে ঢাকার রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে।
প্রচণ্ড রোদের মধ্যে হাজারো জনতা উপস্থিত হয়ে আওয়াজ তোলে—“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর।” এত মানুষের জমায়েত, তপ্ত আবহাওয়া, এবং উত্তপ্ত স্লোগানে রাজপথ যেন ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে।
সিটি করপোরেশনের ‘ঠাণ্ডা’ উদ্যোগ:
সমাবেশের সময় প্রচণ্ড রোদের কারণে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা চরম অস্বস্তিতে পড়েন। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রমী এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্প্রে কানন মেশিনের মাধ্যমে সমাবেশস্থলে পানি ছিটানো শুরু করে তারা, যাতে আন্দোলনকারীরা কিছুটা স্বস্তি পান।
অনেকে বলছেন, এটি প্রশাসনের ‘নীরব সমর্থন’—যা বিরল ঘটনা। উপস্থিত আন্দোলনকারীরা সিটি করপোরেশনের এই সহযোগিতামূলক আচরণকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, “এটাই প্রমাণ করে, আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন না করে বরং সহায়তা করছে কর্তৃপক্ষ।”
স্লোগানে মুখর সমাবেশ:
সমাবেশে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে মুখরিত হয়ে ওঠে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাজপথ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী, এবং নাগরিক সমাজের অনেকে এই সমাবেশে অংশ নেন।
প্রতিটি মুখ যেন একটাই স্লোগান বারবার উচ্চারণ করছিল:
-
“আওয়ামী লীগের কবর খুঁড়”
-
“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর”
-
“ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ”
-
“ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর!”
এছাড়াও তরুণদের হাতে ছিল নতুন ধরনের প্ল্যাকার্ড—যেখানে ডিজিটাল ডিজাইনের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা এবং রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলে ধরা হয়।
আগের রাত থেকেই উত্তেজনার সূচনা:
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকেই উত্তেজনা তৈরি হতে থাকে। দলের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। রাতভর তারা স্লোগান ও ব্যানারসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের ডাক দেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি ঘোষণা দেন, “বাংলাদেশে আর কোনোভাবে একদলীয় শাসন চলবে না। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের মুখোশ পরে স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।”
নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ:
এনসিপির দাবি, আওয়ামী লীগ বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করেছে, এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তাই দলটিকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
তাদের দাবি আরও জোরালো হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে, যেখানে বিভিন্ন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে।
পরবর্তী কর্মসূচির ইঙ্গিত:
সমাবেশের শেষ দিকে বক্তারা আরও কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, “এটাই শেষ নয়। সামনে জাতীয় প্রেস ক্লাব, সচিবালয় ও গণভবনের সামনেও কর্মসূচি আসছে। এই আন্দোলন থামবে না, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়।”
রাজধানীর রাজপথে এই ব্যতিক্রমী সমাবেশ যেমন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, তেমনি প্রশাসনের আচরণও নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাগুলো ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।