যাতায়াত ব্যবস্থা হলো জরুরি সেবা, যা এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ রাখা উচিৎ নয়। যেমন- রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাতায়াত, ডাক্তার এবং নার্স এর হাসপাতালে পৌঁছা, সরকারি কর্মকর্তার অফিস গমন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় যাতায়ত থেকে শুরু করে সড়কে চলাচল করা কোনো যানবাহনকে অপ্রয়োজনীয় বলার সুযোগ নাই। সড়ক হলো ব্যস্ততার জায়গা। জরুরি যাতায়ত না হলেও, প্রতিটা মানুষের সময়ের রয়েছে সীমাহীন গুরুত্ব। সময়ের গুরুত্ব দেয়া একটি সভ্যতা। যে জাতি সময়কে গুরুত্ব দিতে জানে না, সে জাতি উন্নতির শিকড়ে পৌঁছাতে পারে না। এককথায় চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে কিংবা বিঘ্ন ঘটিয়ে বেচাকেনার পক্ষে নুন্যতম যুক্তি কেউ দাঁড় করাতে পারবে না।
তবে কোরবানি এদেশের আপামর জনসাধারণের উৎসব এবং উদ্দীপনার উপলক্ষ। কোরবানি উপলক্ষে পশুর হাট গুলো ক্রেতা-বিক্রেতা, মুসলিম-অমুসলিম সকলে উপভোগ করে। কোরবানির পশুর মাংসও আমাদের দেশে মুসলিম-অমুসলিম সকলে ভাগাভাগি করে খায়। যার ফলে কোরবানির উৎসব মুসলিমদের উৎসব হলেও এতে মুসলিম-অমুসলিম সেতুবন্ধন আরো দৃঢ় হয়। কোরবানি দেখতে উৎসব মনে হলেও, এতে রয়েছে ত্যাগের এক মহা তৃপ্তি। মানুষের অন্তরে ত্যাগের তৃপ্তি তৈরি করতেই কোরবানির হুকুম দিয়েছে ইসলাম। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হালাল সম্পদ ত্যাগের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটিয়ে, মানুষের সময় নষ্ট করে তো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না।
যান চলাচলের জায়গা সড়কের পাশে পশুর হাট বসালে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে যেহেতু স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সেহেতু বিকল্প উপায় বের করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে বহু বিল রয়েছে, রয়েছে খেলার মাঠ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ সমূহ। বিকল্প উপায় হিসেবে প্রথমত ফসলের ক্ষেত না থাকা সাপেক্ষে বিল গুলো বাছাই করা যায়। যেখানে বিল গুলোতে ফসলের ক্ষেত থাকবে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ গুলো বাছাই করা যায়। তারপরও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যেকোনো সড়ক সমস্যা মুক্ত রাখা দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
এই ব্যাপারে আমি প্রথমত পশুর হাটের ইজাদারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এরপর প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এবং সর্বসাধারণের সুবোধ আশা করছি। প্রশাসনের প্রচেষ্টায়, ইজারাদারদের সৌজন্যতামূলক ভুমিকায় এবং সর্বসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতায় এই কাজ অবশ্যই সম্ভব।
এবছর(২০২৫ সাল) যেহেতু সময় এখন শেষের দিকে, আগামী বছর থেকে পশুর হাট গুলো যান চলাচলের জায়গা(সড়ক) বাদ দিয়ে বিকল্প উপায়ে অর্থাৎ মাঠে কিংবা বিলে করার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
মাওলানা মইন উদ্দীন আল ইসলাম
সাংবাদিক এবং ইসলামিক এক্টিভিস্ট।