close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সিলেটজুড়ে বন্যার প্রহর গোনা: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সিলেটে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত বাড়ছে নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল, ডুবে যাচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র—শঙ্কায় পুরো অঞ্চল। বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর..

সিলেটের আকাশ যেন থেমে নেই—টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে এবং ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের জোড়ে বাড়ছে নদনদীর পানি। এতে করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। জলাবদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক এলাকায়, ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল।

শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫৬ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় তা ছিল ১৩২ মিলিমিটার। ফলে নদ-নদীর পানি যেন সব সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।

ডুবে যাচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র, বন্ধ হচ্ছে যোগাযোগ

সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ। গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের কিছু অংশ এরইমধ্যে পানির নিচে চলে গেছে, কোথাও কোথাও লোকজন কোমর পানি ডিঙিয়ে চলাচল করছে।

জাফলং ও বিছনাকান্দির মতো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। একই অবস্থা পাশের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সেখানকার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রও এখন পানির নিচে।

প্রশাসনের আশ্বস্তি বনাম বাস্তবতা

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার বলেছেন, “এখনো পুরোপুরি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।” তবে স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা এবং ক্রমবর্ধমান পানির উচ্চতা অন্য ইঙ্গিত দেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতিমধ্যে আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছে। তাদের তথ্য মতে, সুরমা নদীর পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। শুক্রবার কানাইঘাট পয়েন্টে ১০.২৮ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও শনিবার বিকেলে তা দাঁড়িয়েছে ১১.৬৬ সেন্টিমিটারে, যা বিপৎসীমার মাত্র ১.০৯ সেন্টিমিটার নিচে।

সিলেট পয়েন্টেও সুরমা নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে — শুক্রবার ছিল ৭.৯২ সেন্টিমিটার, শনিবার বিকেলে হয়েছে ৯.৩১ সেন্টিমিটার।

অন্য নদীগুলোর অবস্থাও নাজুক

শুধু সুরমা নয়, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কুশিয়ারা ও শেওলা পয়েন্টেও পানির উচ্চতা বেড়েছে ২.৫ থেকে ৩.০৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। একইভাবে লোভা, সারি, গোয়াইন, ধলাই নদীর পানিও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিলেটের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বেড়ে গেছে।

পাউবোর সতর্কবার্তা: লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে পানি

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন বলেন, “বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদনদীর পানি বাড়ছে, বিশেষ করে সারি, গোয়াইন ও ধলাই নদীর অবস্থা বেশ খারাপ। এখনো পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করবে।”

প্রস্তুত নয় সাধারণ মানুষ, দুর্ভোগের আশঙ্কা

প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ত্রাণ বা আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ঘোষণা না এলেও এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে কৃষিজমি, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ ও এলাকায় সতর্কতা জারি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

No se encontraron comentarios


News Card Generator