বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ধীরে ধীরে জ্বলছে যুদ্ধের আগুন: রাশিয়ার জেনারেলের ঘোষণা—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন এক রূপ নিয়েছে, যা অনেকেই ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়গুলোর একটি বলে মনে করছেন। ১৩ জুন শুক্রবার ভোররাতে, ইসরায়েল “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামে একটি ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং ইরানের ১০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় আক্রমণ চালায়।
এই মুহূর্তেই বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এই আক্রমণ।
রাশিয়ার প্রভাবশালী মেজর জেনারেল আপতি আলাদিনোভ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টভাবে বলেন, “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।” তিনি রাশিয়ার পক্ষে ১০ লাখ নতুন সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করেছেন পুরো বিশ্বকে।
তেহরানসহ ইরানের অন্তত ৮টি শহরে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলা চালায়। এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল:
-
পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র
-
ব্যালিস্টিক মিসাইল ঘাঁটি
-
সামরিক রাডার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ইসরায়েলি গোপনচর সংস্থা মোসাদ তেহরানে গোপনে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছিল, যেখান থেকে এই অপারেশনের অনেক অংশ পরিচালিত হয় বলে টাইমস অফ ইসরায়েল জানিয়েছে। রাতারাতি পরিচালিত এই মিশনে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের এই আক্রমণের কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে। আলজাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সাইরেন বেজে ওঠে শহরজুড়ে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে এবং তারা বলছে, “আমরা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের ওপর শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
-
সৌদি আরব ও তুরস্ক দ্রুত বিবৃতি দিয়ে হামলার নিন্দা জানায়।
-
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, “এই সংঘাত যেন আরও বিস্তৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়।
মেজর জেনারেল আলাদিনোভ বলেন, “এই যুদ্ধ শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পশ্চিমা শক্তিগুলো যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তাতে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের উচিত দ্রুত অন্তত ৫ থেকে ১০ লাখ সেনা প্রস্তুত রাখা, কারণ পরিস্থিতি এখন শুধু সংঘাত নয়, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে,
-
৭৮ জন নিহত
-
৩২৯ জন আহত
তবে বাস্তব সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা এক নতুন সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত হয়তো এক অঞ্চলিক যুদ্ধ হিসেবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এটি ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত যুদ্ধ হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটা থামাতে হলে বিশ্বনেতাদের এখনই কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে ইতিহাসে নতুন এক ভয়াবহ যুদ্ধ অধ্যায়ের সূচনা হয়ে যাবে।