বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমানোর পর, বাংলাদেশে তেলের আমদানির খরচ কমেছে, কিন্তু ভোক্তাদের জন্য দাম কমার সুফল এখনও মেলেনি। দেশীয় বাজারে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম কমানোর সম্ভাবনা থাকলেও, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশীয় পরিশোধনাগারের সীমিত সক্ষমতা এ ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে, তবে দাম কমানোর সুযোগ কী বাংলাদেশে?
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে, যা বাংলাদেশে একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালে তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের কাছাকাছি ছিল, আর এখন তা ৬০ ডলারে নেমে এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশ সস্তায় তেল আমদানি করতে পারবে। কিন্তু দেশের জ্বালানি বাজারে তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। তবে, সরকার স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে দাম সমন্বয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও তার প্রভাব
২০২০ সালে করোনা মহামারির পর থেকে তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোর মধ্যে তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করলেও, বর্তমানে তেলের দাম ৬০ ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের বাজারে, গত বছর ডিজেলের দাম একলাফে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়। এরপর কিছুটা কমানো হলেও, এখনো তেলের দাম জনগণের জন্য অপেক্ষাকৃত উচ্চ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও ডলারের মূল্যের কারণে তেলের দাম দ্রুত কমানোর সম্ভাবনা কম।
বিপিসির অবস্থান ও আসন্ন পরিবর্তন
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, তেলের দাম কমলে এর প্রভাব পরবর্তী মাসে পড়বে, তবে বর্তমান ডলার রেটের কারণে আগের দামে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। বিপিসি আরও জানিয়েছে, তেলের দাম কমানোর পরও ভোক্তার কাছে তা পৌঁছাতে কিছু সময় লাগবে, কারণ তেল দেশে আসতে এক মাস সময় নেয়।
শোধনাগার সক্ষমতা ও আমদানির সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশের একমাত্র শোধনাগারটি ১৯৬৮ সালে তৈরি হয়েছিল এবং এখনো নতুন শোধনাগার নির্মাণের জন্য সরকার পরিকল্পনা নিচ্ছে। তবে, শোধনাগারের অপ্রতুল সক্ষমতার কারণে দেশ প্রতিবছর তেল আমদানি করে এবং এর ফলে দাম কমানোর প্রক্রিয়া স্লো হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের খরচ বৃদ্ধি: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
দেশের জ্বালানি তেলের ৭৫% চাহিদা পূরণ হয় ডিজেল দিয়ে, যা কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যবহৃত হয়। ডিজেলের দাম বাড়লে, পণ্যের দামও বাড়ে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে। বিপিসি প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে থাকে, কিন্তু তা সব সময় ভোক্তা-সহায়ক মূল্যে পাওয়া যায় না। তবে, বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হলে, কিছুটা দাম কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
শেষ কথা
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমানো বাংলাদেশে কিছু সুফল এনে দিতে পারে, তবে এটি ভোক্তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলবে। সরকার যদি তেলের মূল্য নির্ধারণের ত্রুটিপূর্ণ সূত্রগুলো ঠিক করে এবং বিশ্ববাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দাম কমায়, তবে উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের সামনে রয়েছে তেলের দাম কমানোর যথেষ্ট সুযোগ, তবে বাস্তবতায় কতটা সুফল মিলবে, তা দেখার বিষয়।