আহমাদুল রহমান: গাজীপুর
দিন বদলেছে, প্রযুক্তি এগিয়েছে, কিন্তু আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। একের পর এক অপহরণ, গুম, খুন—বাংলাদেশ যেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছে।
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে—অজানা স্থানে নিখোঁজ শিশু, অর্ধগলিত লাশ, কিংবা কেঁদে ভেঙে পড়া পরিবার। এই বাস্তবতা এখন রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত।
গাজীপুর: আধুনিকতার শহরেও ভয়ের ছায়া
প্রচলিত ধারণা, শহরে মানুষ বেশি নিরাপদ। কিন্তু গাজীপুর যেন সেই ভুল ধারণায় এক চরম প্রতিবাদ। আধুনিকতার নগরী, শিল্পাঞ্চল, বড় বড় কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ঘেরা এই জেলাতেও শিশু ও নারী নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে।
সম্প্রতি গাজীপুরের এক নামকরা সরকারি কলেজের নারী শিক্ষক ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। অজানা এক নাম্বার থেকে ফোনে চাঁদা দাবি করে অপরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি যখন দিতে অপারগতা জানান, তখনই হুমকি আসে—
“আপনার সন্তান কোন স্কুলে পড়ে, কখন কোথায় যায়—সব জানি। আমাদের কথায় না চললে তার পরিণতি খারাপ হবে।”
ঘটনাটি শুধু একটি ফোন কলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ওই শিক্ষিকা এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন। অথচ এত বড় ঘটনা হয়েও তিনি থানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন—কারণ, তিনি জানেন না প্রশাসন তাঁকে রক্ষা করতে পারবে কি না।
এই ঘটনাটি হয়তো পত্রিকার পাতায় আসেনি, কিন্তু এমন অসংখ্য গল্প প্রতিদিন গড়ে উঠছে আমাদের চারপাশে—নিঃশব্দে, নিঃস্বরে।
সমাজ কি কেবল দর্শক?
আমরা কী করছি? খবর পড়ে চোখ বড় করি, তারপর আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি নিজেদের জীবন নিয়ে। কিন্তু যে মা তার সন্তান হারানোর ভয়ে রাতের ঘুম হারাচ্ছেন, তার জন্য কি আমরা কিছুই করতে পারি না?
এই চক্রের মূল শক্তি তাদের “ভয়ের পরিবেশ” তৈরি করা—যেখানে মানুষ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় না। আমরা যদি চুপ থাকি, তারা আরও বেপরোয়া হবে।
কী করণীয়?
১. প্রশাসনকে হতে হবে আরও সক্রিয় ও হিউম্যান-সেন্ট্রিক। শুধু কাগুজে তদন্ত নয়, বাস্তবভিত্তিক নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন।
২. নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে।
৩. সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে মিডিয়া, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, এনজিওদের ভূমিকা নিতে হবে।
৪. মোবাইল ট্র্যাকিং, নিরাপত্তা ক্যামেরা ও ডেটা বিশ্লেষণে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার জরুরি।
শেষ কথা
গাজীপুরের সেই শিক্ষিকার কণ্ঠস্বর যেন আজ দেশের হাজারো নারীর প্রতিচ্ছবি—ভয়, আতঙ্ক, নিঃস্বতা। শিশুরা এখন আর শুধু অপহৃত হচ্ছে না, তারা হারিয়ে ফেলছে নির্ভয় শৈশব।



















