close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

শিক্ষাবন্ধু হামিদুল হক মাস্টার: কসবার এক আলোকবর্তিকার বিদায়..

সাইদুল ইসলাম avatar   
সাইদুল ইসলাম
****

শিক্ষা, সততা, ন্যায়বিচার ও সমাজসেবার প্রতীক হিসেবে যাঁকে কসবা অঞ্চলের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে, তিনি হলেন শিক্ষাবন্ধু হামিদুল হক মাস্টার। তিনি কসবা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আকছিনা গ্রামের গর্বিত সন্তান। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল সমাজ, শিক্ষা ও মানবিক উন্নয়নের জন্য এক নিরলস সংগ্রাম।

হামিদুল হক মাস্টার জন্মগ্রহণ করেন এক আদর্শ পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন হাজী সৈয়দ আলী এবং মা ছিলেন সূর্যবান নেছা। তাঁদের নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের ছায়া পড়ে হামিদুল হকের চিন্তা ও চরিত্রে। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সমাজ সচেতন, ন্যায়নিষ্ঠ ও শিক্ষা-প্রবণ।

শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন হাজারো শিক্ষার্থীর প্রেরণার উৎস। খাড়েরা মোহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং পরে পানিয়ারুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি দক্ষতা, আন্তরিকতা ও আদর্শের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তবে তাঁর অবদান এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কসবার শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রাখেন।

তাঁর উদ্যোগ ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে কসবায় গড়ে ওঠে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কসবা টি. আলী ডিগ্রি কলেজ, কসবা পৌর উচ্চ বিদ্যালয়, কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জয়নগর লিয়াকত আলী উচ্চ বিদ্যালয়, কুটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং আকছিনা কুল্লাবাড়ি দাখিল মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পেছনেও তাঁর আন্তরিক সহায়তা, আর্থিক অনুদান এবং মানসিক শ্রম ছিল প্রশংসনীয়।

চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন একজন জনদরদি ও উন্নয়নমনস্ক নেতা হিসেবে। তাঁর সময়কালে কসবা সদরের বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, বাজার এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। সৎ নেতৃত্ব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ন্যায়ের প্রতি তাঁর অটল অবস্থান তাঁকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

তাঁর নেতৃত্বের পরিধি ছিল বহুবিস্তৃত। দি-কসবা কো-অপারেটিভ, কসবা উপজেলা পাট চাষী সমিতি, কসবা সমবায় সমিতি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, কসবা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, মোসলেমগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটি সহ বহু সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সংগঠনগুলোকে গতিশীল ও সমাজমুখী করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনন্য।

হামিদুল হক মাস্টারের জীবন ছিল নিঃস্বার্থ সেবার এক প্রতীক। তাঁর কর্মময় জীবন, সততা, আদর্শ এবং মানুষের জন্য নিবেদন আজও কসবার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে আছে। তিনি ছিলেন এমন একজন, যাঁর জীবন কেবল নিজের জন্য নয়—ছিল সমগ্র সমাজের কল্যাণে নিবেদিত।

 

পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ছেলে, প্রবাসী রাকিবুল হক রুমন বলেন,আজ ১৮ জুন ভোর ৫টায় আমার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। বাবার রেখে যাওয়া আদর্শ অনুযায়ী আমরা চলার চেষ্টা করে যাব এবং আগামীর প্রজন্মকে বাবার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলব।

তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক অবদান এবং উন্নয়নমূলক কাজ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।

আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই মহান মানুষটিকে এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

Nessun commento trovato


News Card Generator