close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

শেখ হাসিনার মৃ'ত্যু'দ'ণ্ডে'র পর; আ.লীগের ভবিষ্যৎ কোনদিকে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পর দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও নেতৃত্ব নিয়ে চলছে গভীর বিশ্লেষণ। দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নেতৃত্বের শূন্যতা দলের টিকে থাকার প্রশ্নকে সামনে এনেছে।..

দেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও আইনি ভবিষ্যৎ। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে দলটির সমর্থক থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ পর্যন্ত চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই রায়কে ঘিরে দলের টিকে থাকা, এর পরবর্তী নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক কাঠামোর প্রশ্নগুলো প্রকটভাবে সামনে এসেছে।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন মেনে এ বিচার সম্পন্ন হওয়ায় পর্যবেক্ষকদের মতে এটি এখন বাস্তবতা। যদিও ভারতে পলাতক থাকার কারণে রায় কার্যকর হওয়া কঠিন, তবুও দলটির রাজনীতি কার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে, নাকি বর্তমান দুর্বল অবস্থায় টিকে থাকবে—এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো উত্তরাধিকারের রাজনীতি (ডাইনাস্টি পলিটিক্স) থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। এক-এগারোর সময় 'সংস্কারপন্থি' হিসেবে পরিচিত নেতাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার উদাহরণ সামনে থাকায়, বর্তমানে নতুন নেতৃত্ব সামনে আসতে দ্বিধাগ্রস্ত।

তবে, বিশেষজ্ঞদের আলোচনা অনুযায়ী, আপৎকালীন নেতৃত্বের জন্য বেশ কয়েকটি নাম উঠে আসছে। এদের মধ্যে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী-কে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া, কেউ কেউ কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী-র কথাও বলছেন। তবে, এই সব সম্ভাব্য নেতৃত্বই ভারতে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতের ওপর নির্ভরশীল বলে সূত্র জানায়।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক বিবৃতিতে বলেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখন খুব কম। আইসিজি আরও জানিয়েছে, তিনি নেতৃত্বে থাকলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ময়দানে ফেরা সহজ হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেন, দলটিকে টিকে থাকতে হলে অতীতের অপরাধের দায় ও ভুল স্বীকার করে 'ক্লিন ইমেজ'র নতুন নেতৃত্ব সামনে আনতে হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস গবেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের দায় ও জবাবদিহিতার ব্যাপার রয়েছে। দলটির রাজনীতি অব্যাহত রাখতে হলে এগুলোর বিষয়ে বক্তব্য দিতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বিচার চলার পাশাপাশি নির্দোষ কর্মীদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ টেনে 'ন্যাশনাল রি-কনসিলিয়েশন' বা রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমানও মনে করেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড এবং শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বে ফেরা সম্ভব নয়, তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রাসঙ্গিক থাকবেই, যদিও নেতৃত্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তিনি শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবের হোসেন চৌধুরী বা আইভী রহমানের মতো ক্লিন ইমেজের নেতাদের সামনে আসার সম্ভাবনার কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, শেখ হাসিনা নিজেও এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর পরিবারের বাইরেও যে কেউ দলের দায়িত্বে আসতে পারে।

দলটির তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেছেন, একদিকে দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, অন্যদিকে দলীয় সভাপতির মৃত্যুদণ্ডের সাজা—এই পরিস্থিতিতে তাদের সামনে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তারা মনে করেন, দেশের বাইরে থেকে শুধু সাক্ষাৎকার দিয়ে বা ছোটখাটো ঘটনা ঘটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক তৎপরতা বৈধ দলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত বলে তারা হাই-কমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দলীয় সভাপতির সাজা হলে তিনি পদে থাকতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ২৫ এর (১) এর 'ক' ধারা অনুযায়ী, সভাপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর যেকোনো সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারেন।

নেতৃত্বের আলোচনায় থাকা সাবের হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত ছাড়া তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজনৈতিক মহলে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ, খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি এবং এরশাদের বংশধর ছাড়া জাতীয় পার্টি চলবে না। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই রায় ও পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন না এবং এই নতুন পরিস্থিতি দলের ভবিষ্যৎ কী দাঁড় করায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator