close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু, চলছে সরাসরি সম্প্রচার। ট্রাইব্যুনালে হাজির রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। মামলা ঘিরে চাঞ্চল্য তুঙ্গে।..

২০০৭ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত কথিত গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে। এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা এ দেশে নজিরবিহীন একটি ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় মামলার শুনানি। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই মামলায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনার পাশাপাশি আরও দুইজন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—অভিযুক্ত হয়েছেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে মো. আমির হোসেনকে।

মামলায় বলা হয়েছে, জুলাই মাসে সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংস বিক্ষোভ ও পাল্টা দমন অভিযান হয়েছিল, তার সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, যার ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আদালতের রেকর্ড অনুসারে, গত ১ জুন এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। সেদিনও পুরো কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

আজকের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন এবং অভিযোগ গঠনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। এসময় তারা বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিচারযোগ্য একটি গুরুতর বিষয়। অভিযুক্তদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেই আমরা শাস্তি দাবি করছি।”

তবে এ বিষয়ে এখনও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়নি। আগামী শুনানিতে তাদের জবাবদিহির সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে জনমনে এ মামলা ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ থেকে মতামত, প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, একদিকে এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, অপরদিকে অভিযুক্তরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিকভাবে এ মামলার ফলাফল নজর কাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

আইন বিশ্লেষকরা আরও বলেন, এই বিচার কার্যক্রম যদি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এদিকে ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, পুরো বিচার প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব দ্রুত সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা যেন ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখার কথা বারবার বলা হচ্ছে।

সার্বিকভাবে আজকের শুনানি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ ও নজরকাড়া। আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এ মামলার ওপর গভীর দৃষ্টি রেখেছেন।

শুনানির পরবর্তী তারিখ শিগগিরই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের মুখপাত্র। তবে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে এই বিচারকাজকে দেখা হচ্ছে—যেখানে আইনের শাসন বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।

এই মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নতুন মাত্রা পেল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে এখন সারাদেশের চোখ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। কী হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই।

کوئی تبصرہ نہیں ملا