অডিও ক্লিপে বিস্ফোরক দাবি, তদন্তে মিলল শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর
দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি অডিও বক্তব্যে দাবি করা হয়—"আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।" এ বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অডিওটি নিয়ে তদন্তে নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) তদন্ত সংস্থা। ফরেনসিক বিশ্লেষণ শেষে তারা নিশ্চিত করেছে—বক্তব্যটি দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমন বিস্ফোরক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি শুধু ভয়ংকর নয়, বরং বিচার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং বিচারকদের হুমকির শামিল। তাই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
বিচারকার্যে হস্তক্ষেপের অভিযোগ, প্রকাশ্যে বিজ্ঞপ্তি চেয়ে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ
এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৫ মে (রোববার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ জারি করেছে। আদেশে বলা হয়, আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনাকে হাজির করতে হবে ট্রাইব্যুনালে। তবে ব্যক্তিগতভাবে সমন পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হাজিরা দিতে বলা হবে নির্ধারিত তারিখে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এমন বক্তব্য শুধু বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে না, বরং জাতির সামনে আইনের শাসনের প্রতি ভয়ংকর বার্তা দেয়। এই অডিও বক্তব্য বিচারকদের মানহানিকর এবং বিচারকাজে হস্তক্ষেপের স্পষ্ট উদাহরণ।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নজিরবিহীন
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল এবং তাকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হাজিরার নির্দেশ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অতুলনীয় ও নজিরবিহীন ঘটনা। বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে উত্তপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আদালত প্রমাণিত অডিওর ভিত্তিতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এটি হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড়। অন্যদিকে শেখ হাসিনা বা তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মহল থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া, জনমনে উত্তেজনা
অডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, এটি “আইনের জন্য পরীক্ষা”। কেউ আবার দাবি করছেন, এটি একটি “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র”। তবে আদালতের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং নির্দেশনার পর পরিষ্কার যে বিষয়টি কোনো গুজব নয়—বরং বাস্তব ও বিচারযোগ্য অভিযোগের পর্যায়ে চলে গেছে।
ফরেনসিক পরীক্ষায় অডিওর কণ্ঠস্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলে শনাক্ত হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার হাজিরার বিজ্ঞপ্তি। এটি এক ঐতিহাসিক ও নাটকীয় মুহূর্ত—যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রেক্ষাপটে গভীর আলোড়ন তুলতে চলেছে। এখন দেখার বিষয়, শেখ হাসিনা নিজে কী প্রতিক্রিয়া দেন, এবং আদালতের সামনে তিনি আদৌ হাজির হন কি না।