close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

শেখ হাসিনাকে কি ভারত সোপর্দ করবে?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এই রায় কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা কাম্য নয়, বরং তা কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। এই রায় বাস্তবায়নের চাবিকাঠি এখন নয়াদিল্লির হাতে।..

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি এখন ভারত সরকারের দিকে পলাতক শেখ হাসিনাকে কি নয়াদিল্লি বাংলাদেশের কাছে সোপর্দ করবে? শেখ হাসিনা একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হিসেবে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, যা দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সরকারের কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেলেও, দিল্লি এই বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি (Extradition Treaty) রয়েছে, যা ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির মূল কথা হলো—এক দেশের ভূখণ্ডে থাকা কোনো অপরাধী অন্য দেশের অনুরোধে সোপর্দযোগ্য।

  • বাংলাদেশের দাবি: ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে চূড়ান্তভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে ফেরত দেওয়া ভারতের 'অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব'। দণ্ডপ্রাপ্ত একজন গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া হবে বাংলাদেশের প্রতি 'শত্রুভাবাপন্ন কাজ'।

  • ভারতের আইনি পথ: তবে, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিতে কিছু ফাঁকফোকর (loopholes) থাকে, যা দেশগুলো রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করতে পারে। শেখ হাসিনাকে সোপর্দ না করার জন্য ভারত চুক্তি বা তাদের নিজস্ব আইনের কিছু ধারা ব্যবহার করতে পারে—বিশেষত রাজনৈতিক আশ্রয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার অজুহাত হিসেবে।

ভারতের রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি সবসময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর নির্ভরশীল। এই রায় ঘোষণার পর ভারত সরকার অত্যন্ত কৌশলী অবস্থান নিয়েছে:

  • 'নজরে আসা'র কৌশল: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল জানিয়েছে যে, রায়টি তাদের 'নজরে এসেছে' (Noted)। এই ভাষা ব্যবহার করে তারা রায়ের বিষয়টিকে স্বীকার করলেও, তা নিয়ে কোনো আইনি বা রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে।

  • বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ: বিবৃতিতে তারা জোর দিয়েছে যে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের 'সর্বোচ্চ স্বার্থ' বিবেচনা করে এবং দেশটির শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। এই 'জনগণের স্বার্থ' শব্দটি ব্যবহার করে ভারত কার্যত একটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে—যেন জনগণের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে তারা এড়িয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তও নিচ্ছে না।

  • রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব: একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, যার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাঁকে আশ্রয় দেওয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে সোপর্দ করার মতো চরম রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভারত অনীহা দেখাতে পারে। দিল্লি যদি দ্রুত সোপর্দ না করে, তবে বুঝতে হবে কূটনৈতিক স্বার্থ বা অন্য কোনো কারণে তারা গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়াকেই আপাতদৃষ্টিতে শ্রেয় মনে করছে।

বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটি এখন স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা তাঁর কৃতকর্মের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত। এই রায় কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা কাম্য নয়, বরং তা কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। এই রায় বাস্তবায়নের চাবিকাঠি এখন নয়াদিল্লির হাতে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে সোপর্দ করার বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে, ভারত যদি এই 'গণহত্যাকারীকে' আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখে, তবে তা কেবল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি নয়, বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া হাজারো মানুষের রক্তের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল হবে। ভারত সরকারকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়বিচারের দাবিকে মূল্য দেবে, নাকি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে আশ্রয় দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

نظری یافت نشد


News Card Generator