close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

শব্দের বিষফোঁড়া: মিথ্যা ও গুজবের ছোবলে বিধ্বস্ত সমাজ

Md Sayfullah Khan avatar   
Md Sayfullah Khan
শব্দের বিষফোঁড়া:
মিথ্যা ও গুজবের ছোবলে বিধ্বস্ত সমাজ :আজ ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মিথ্যার বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মিথ্যা তথ্য অনেক সময় সত্যের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়..

মো.সাইফুল্লাহ খান :

সমাজের নীরব ঘাতক :

মানুষের মুখের উচ্চারিত শব্দ হতে পারে গঠনমূলক হাতিয়ার, আবার সেটিই হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসের ভয়াবহ অস্ত্র। একটি মাত্র মিথ্যা, একটি গুজব কিংবা লাগাতার চোগলখোরি—এসব শুধু একজন মানুষ নয়, বরং পরিবার, প্রতিষ্ঠান এমনকি একটি জাতিকেও বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
বর্তমান সময়ে মিথ্যা, গুজব, চরিত্রহনন ও চোগলখোরি যেন সমাজে এক মহামারির রূপ নিয়েছে।

মিথ্যার দানবীয় ছায়া:

আজ ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মিথ্যার বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মিথ্যা তথ্য অনেক সময় সত্যের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কারণ তা সাধারণত আবেগনির্ভর ও চটকদার হয়ে থাকে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন—
“তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো, কারণ মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।” (বুখারি)

গুজবের বিষাক্ত আগুন:

একটি ভুয়া খবর, একটি বিকৃত পোস্ট, কিংবা গুজবের ঝড় মুহূর্তে পুরো সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ধর্ম অবমাননার গুজব কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছড়ানো অপপ্রচারে নিরীহ মানুষ গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্যবার।

আল্লাহ তাআলা বলেন—
“হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা যাচাই করে নিও।” (সূরা হুজুরাত: ৬)

চোগলখোরি: নীরব বিভাজনের অস্ত্র

পরিবারে, অফিসে কিংবা বন্ধুমহলে চোগলখোররা বিভেদ সৃষ্টি করে, সম্পর্ক ভাঙে এবং সামাজিক আস্থাকে দুর্বল করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহিহ মুসলিম)

চরিত্রহননের নোংরা খেলা:

সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভুয়া পোস্ট, সাজানো স্ক্রিনশট বা বিকৃত ভিডিওর মাধ্যমে চরিত্রহনন এখন ডিজিটাল অপরাধে রূপ নিয়েছে। একটি মিথ্যা তথ্য একজন মানুষের আজীবনের সুনাম ধ্বংস করতে পারে।

সাইবার গুজব ও বুলিং:

ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া ভিডিও, ফেক স্ক্রিনশট ও গুজব ছড়ানো যেন নিয়মিত ঘটনা। এতে কিশোর-কিশোরীসহ অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছে, এমনকি আত্মহত্যার মতো চরম পথও বেছে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার

রাজনীতি ও ধর্ম—এই দুই সংবেদনশীল বিষয়ের আশ্রয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়। উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা, সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা। এতে জাতীয় ঐক্য, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিচার ব্যবস্থায় মিথ্যা সাক্ষ্য :

সমাজের শেষ ভরসাস্থল হলো বিচারব্যবস্থা। অথচ সেখানে যদি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রবেশ করে, তবে নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পায়, অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া শিরকের মতোই ভয়ংকর।” (সহিহ বুখারি)

ভয়াবহ পরিণতি :

সমাজে অনাস্থা ও বিভেদ সৃষ্টি হয়

ভালো মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে

শিশু-কিশোররা মিথ্যার শিক্ষা পায়

মানসিক অবসাদ ও আত্মহত্যা বাড়ে

সামাজিক বন্ধন ভেঙে যায়


করণীয়:

১.পরিবার থেকে সততার শিক্ষা দেওয়া
২.শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা অন্তর্ভুক্ত করা
৩.মিথ্যা রটনাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা
৪. ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা
৫দায়িত্বশীল মিডিয়া ও ফ্যাক্ট-চেকিং শক্তিশালী করা
৬. যাচাই না করে কোনো তথ্য শেয়ার না করা
৭. রাজনৈতিক নেতাদের সত্যবাদিতার অঙ্গীকার করা

মিথ্যা, গুজব, চোগলখোরি ও চরিত্রহনন—এসব সামাজিক ব্যাধি নীরব ঘাতকের মতো একটি জাতিকে ভেতর থেকে দুর্বল করছে। মুক্তির একমাত্র পথ হলো সত্যভাষণ, সততা, সচেতনতা ও পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠা করা।

তাই আসুন, কথার মারপ্যাঁচ নয়—সত্য ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি।

No comments found