শান্তি এলেই ভেঙে পড়বে সাম্রাজ্য—তাই যুদ্ধই তাঁদের আশ্রয়..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজা থেকে ইউক্রেন—যুদ্ধই যেন তাঁদের বাঁচার রাস্তা। শান্তি এলেই জনগণের বিচার ও পতন অনিবার্য জেনে রণমূর্তি ধরে রেখেছেন নেতানিয়াহু ও পুতিন। এই রক্তাক্ত নাটকে মানবতা কাঁদে, অথচ তাঁরা আগুনে ঘি ঢালেন।..

যুদ্ধ নয়, রাজনীতি বাঁচানোর হিংস্র অস্ত্র

৮০ বছর আগে নাৎসি জার্মানির পতনের ইতিহাস স্মরণ করে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এই সৌজন্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর প্রতারণা—নিজেদের ‘নাৎসিবিরোধী’ বলার নাম করে তাঁরা আজ বিশ্বের দুই সবচেয়ে বিতর্কিত যুদ্ধনেতা।

এই দুই শাসক নিজেদের দেশে ও বাইরে সমালোচনার মুখে থাকলেও যুদ্ধকেই ক্ষমতায় থাকার উপায় বানিয়েছেন। শান্তি নয়, রক্ত আর ধ্বংসই যেন তাঁদের মূল রাজনৈতিক পুঁজি। গাজা ও ইউক্রেনের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলকে তাঁরা পরিণত করেছেন নিষ্ঠুর যুদ্ধের পরীক্ষাগারে।

শিশুহত্যা ও ধ্বংসের রাজনীতি

নেতানিয়াহু ও পুতিন—দু’জনেই আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত হয়ে উঠেছেন শিশুহত্যা, বেসামরিক গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য। তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক অভিযোগ, এমনকি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। তবু থেমে নেই তাঁদের আগ্রাসন।

পুতিন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে কিয়েভে হামলা জোরদার করেছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন গোটা অঞ্চল। তাঁরা যুদ্ধকে বৈধতা দিতে ইতিহাসের বিকৃত ব্যবহার করছেন—যেন শান্তি এলেই তাঁদের ‘সাম্রাজ্য’ ভেঙে পড়বে।

উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় আবেগের ছোঁয়া

এই দুই নেতা কেবল যুদ্ধ নয়, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় আবেগের রাজনৈতিক ব্যবহারেও পারদর্শী। পুতিন ‘নতুন সোভিয়েত সাম্রাজ্য’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর, আর নেতানিয়াহু চান ‘গ্রেটার ইসরায়েল’। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূলে রয়েছে জাতিগত আধিপত্য ও বর্ণবাদের মনোভাব।

নিজেদের দেশের ভেতরে সমালোচনার মুখ বন্ধ করতে তাঁরা ব্যবহার করছেন আইন, সেনাবাহিনী এবং ধর্মকে। এই নীতিতে বিরোধীদের জন্য নেই কোনো জায়গা—শুধু একনায়কতন্ত্রের স্তব্ধতা।

আন্তর্জাতিক চাপে সংকুচিত, তবুও আক্রমণাত্মক

পুতিন ও নেতানিয়াহু দু’জনেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক চাপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জর্জরিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিলেও, তাঁরা বরং আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন।

পুতিন ইউরোপে নতুন হামলার হুমকি দিচ্ছেন। আর নেতানিয়াহু শুধু গাজা নয়—লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং এমনকি ইরানেও হামলার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে তিনি মরিয়া।

ট্রাম্প-নীতির দুর্বলতা এবং চরম মূল্য

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুই নেতার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে পুতিন ও নেতানিয়াহু নিজেদের মতো করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছেন। ট্রাম্পের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ আচরণ বা নিরপেক্ষতা এই যুদ্ধপ্রবণ শাসকদের আরও উৎসাহ দিচ্ছে।

এই মুহূর্তে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপই পারে বিশ্বকে বাঁচাতে। শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ছাড়া নেতানিয়াহু-পুতিন জুটির রণনীতি রোধ করা অসম্ভব।

শান্তির ভয়ই সবচেয়ে বড় শত্রু

সবশেষে একটাই কথা স্পষ্ট—এই দুই নেতার কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক শান্তি। যুদ্ধ চললে জনগণকে চুপ রাখা যায়, বিরোধীদের দমন করা যায়। কিন্তু শান্তি এলে প্রশ্ন উঠবে শিশুদের মৃত্যু, বিধ্বস্ত শহর আর মানবিক বিপর্যয়ের—তখন আর কোনো ‘নাৎসিবিরোধী’ গল্প কাজে আসবে না।

সেই ভয়েই তাঁরা যুদ্ধকে টিকিয়ে রাখতে চান। কারণ শান্তি মানে বিচারের মুখোমুখি হওয়া, ক্ষমতা হারানো, ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। আর সে সত্যিই তাঁরা সহ্য করতে পারেন না।

Inga kommentarer hittades