close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাতক্ষীরার তালায় জবরদখলকারীদের হামলায় আহত শ্রমিক, উত্তেজনা বিরাজমান..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা avatar   
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ভূমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলায় গুরুতর আহত মুন্না সানা। ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ঘোষনগর গ্রামে ভূমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এক সহিংস হামলায় মুন্না সানা (২৩) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় দখলদার বাহিনী তার উপর হামলা করে এবং তার মাথায় আঘাত করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা লোহার রড, চাপাতি ও হাতুড়ি নিয়ে মুন্নার বাড়িতে হানা দেয়। মুন্নার মা সুজাতা বেগমের চিৎকারে গ্রামবাসীরা ছুটে এসে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্নাকে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

পরে, হামলাকারীরা তালা হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় মুন্না ও তার স্বজনদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা প্রতিরোধ করলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং পরে মুন্নার বাড়িতে ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়। এই ঘটনা গত ৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে।

জানা যায়, এর আগে ২ জুলাই পাইকগাছা উপজেলায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখারুল আলম শামীমের নেতৃত্বে সেনা তত্ত্বাবধানে খাস খালের নেট-পাটা অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। পরদিন ৩ জুলাইও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও দখলদারদের প্রতিরোধের মুখে তা ব্যাহত হয়।

এই হামলার পেছনে রয়েছে খাস খালের দখলের চেষ্টা। সরকারি জলমহাল ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে খালটি আপাতত উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দখলদাররা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। স্থানীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলোর টেন্ডার আবেদনও খারিজ করা হয়।

এ বিষয়ে কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ দাশ জানান, হামলার খবর পেয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। ছুটিতে থাকায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, তবে তিনি অফিসে ফিরে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আজগর হোসেন জানান, তিনি ঐদিন খুলনায় ছিলেন এবং ঘটনাটি তালা থানার আওতায় পড়ায় এনিয়ে পাইকগাছা থানায় কোনও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে তিনি এএসপি (সার্কেল) পাইকগাছাসহ খাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং বর্তমানে সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন।

গোটা ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস। গত বছর ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নাছিরপুর খালটি দখল-বেদখলের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে থানায় মামলা-পাল্টা মামলা চলছে। খালটির ইজারা প্রদান সংক্রান্ত টেন্ডার আহ্বান করা হলে ৩টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে টেন্ডার ড্রপ করা হয়। যার মধ্যে একটি তালতলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি: যা সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলুর নিয়ন্ত্রণাধীন।

খালটির দখল নিয়ে স্থানীয়রা আন্দোলন শুরু করলে ভূমি মন্ত্রণালয় জলমহালটি উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, দখলদারদের প্রতিরোধ ও হামলার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি, তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এছাড়া, পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের ভূমিকা পালন করছেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

No comments found