বঙ্গভবনের চারপাশে ‘মব আতঙ্ক’: রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ, ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থানে আছেন বললেন গোলাম মাওলা রনি
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা, জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বা মব সন্ত্রাস নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই ‘মব আতঙ্ক’ শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ বঙ্গভবনেও এখন তার ছায়া ফেলেছে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
এক আলোচিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরাসরি কথা না হলেও, তার ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যেটা বুঝেছি, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আতঙ্কিত, সবচেয়ে কর্মহীন ও সবচেয়ে একা একজন মানুষ — তিনি হলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
রনির মতে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের চারপাশে রয়েছে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা, সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকস ইউনিট প্রেসিডেনশিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (PGR) নিয়োজিত। এই বাহিনীর অধিনায়ক একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা, যার অধীনে সম্পূর্ণ একটি রেজিমেন্ট রয়েছে। এই বাহিনী ট্যাংক, কামান, এমনকি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় সক্ষম। তা সত্ত্বেও বঙ্গভবনের চারপাশে ‘মব’ আক্রমণের শঙ্কা রয়েছে, যা রাষ্ট্রের অব্যবস্থার ভয়াবহ রূপ প্রকাশ করছে।
রাষ্ট্রপতি কি স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারেন? সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ যেভাবে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতেন, তেমন স্বাধীনতা কি সাহাবুদ্দিনের আছে? বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তা মনে হয় না।
রনি আরও বলেন, “বঙ্গভবন বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ভবন, যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তি থাকেন। অথচ সেই স্থানে এখন মব হুমকি, ভয়, শঙ্কা কাজ করছে। মবের স্লোগান উঠছে — ‘বঙ্গভবন আক্রমণ করা হবে, ভেঙে ফেলা হবে, এই তারিখে অভিযান চালানো হবে।’ এগুলো কেবল স্লোগান নয়, বরং রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকার্যকর করে তোলার লক্ষণ।
যে বাহিনী বঙ্গভবন পাহারা দেয়, তাদের এত শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা যেন অকার্যকর হয়ে আছে। রাষ্ট্রপতির হুকুম ছাড়া তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। অথচ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন নাজুক অবস্থায় রাষ্ট্রপতি কার্যত অচল, বাকরুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
সাবেক এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, “এসএসএফের চাইতেও আধুনিক অস্ত্র ও শক্তি রয়েছে প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের হাতে। কিন্তু সেটি কি বাস্তবে কাজে লাগানো হচ্ছে? রাষ্ট্রপতি কি আদৌ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন? আমার মনে হয়, না।”
যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির অবস্থান এতোটা অনিরাপদ ও কার্যত অচলাবস্থায় থাকে, সেখানে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
রনির এই বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—এই পদটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, নাকি বাস্তবে কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখে?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং মব-সন্ত্রাসের উত্থানকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভবনেও যদি নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে, তাহলে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে তা ভাববার সময় এসেছে।