সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, রাতে সরকারের সিদ্ধান্তে বিজয় মিছিল..

Amran Ahmed avatar   
Amran Ahmed
এমরান আহমদ,সিলেট থেকেঃ
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে সিলেট নগরীতে এক বিরাট গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে।..

শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টা থেকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। জুলাই জাতীয় ঐক্য-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।

যদিও কর্মসূচি শুরু হওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল বিকেল ৩টা, তার আগেই, দুপুর আড়াইটা থেকে শহীদ মিনার এলাকায় মানুষ জমায়েত হতে শুরু করেন। বিকেল গড়াতেই হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়কের একপাশের যান চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ যাত্রীরা।

গণজমায়েতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও পেশাজীবী শ্রেণির মানুষ। বক্তারা সরাসরি দাবি তোলেন, আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে বিচার করতে হবে এবং অবিলম্বে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

গণজমায়েতে বক্তারা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন ইতিহাসে একটি বাঁক। এখানে যারা এসেছে, তারা স্বেচ্ছায় এসেছে-কারও নির্দেশে নয়। আওয়ামিলীগ দীর্ঘ  ১৭ বছরে ক্ষমতায় থেকে এদেশের মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। তারা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নেতাদের হত্যা করেছে, গুম করেছে। অন্যায়ের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম করে আমাদের জেল জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। আমরা আর এই অবৈধ গোষ্ঠীকে রাজনীতি করতে দেব না। 

একপর্যায়ে হ-তে হাসিনা তুই খুনী-তুই খুনী, ক তে কাদের তুই খুনী তুই খুনী, ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, ইনকিলাব জিন্দাবাদ—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চৌহাট্টা মোড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলা অবস্থান কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নেমেছিলো।

আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, ঠিক তখনই রাত ৮টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় শুরু হয় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক। উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রমূখ

বৈঠক শেষে রাত ১১টায় সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন আইন উপদেষ্টা: আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

এই ঘোষণা পর রাতেই উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। আন্দোলনকারীরা আবারো চৌহাট্টায় জমায়েত হয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। মিছিল শহরের কোর্ট পয়েন্ট, বন্দর বাজার, জিন্দাবাজার, দরগাগেইট, চৌহাট্টা, আম্বরখানা হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও যুক্ত হয়। শহরের আকাশপ্রান্ত জুড়ে ছিল উৎসবমুখর স্লোগান আর উল্লাসধ্বনি।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাগরিবের নামাজের পর কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও নিষিদ্ধ ঘোষণার খবরে মধ্যরাতে চৌহাট্টা আবারো প্রাণ ফিরে পায়। উৎসবের আবহে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে জনসমুদ্র।

Комментариев нет