সারা দেশে পেট্রল পাম্পে ধ'র্ম'ঘট, জ্বালানির জন্য হাহাকার—আন্দোলনের হু'ম'কি দিলেন মালিকরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আজ সকাল থেকে দেশের সব পেট্রল পাম্পে বিক্রি বন্ধ থাকায় শুরু হয়েছে জ্বালানি সংকট। ১০ দফা দাবিতে ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহনও বন্ধ। দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাম্প..

সারা দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহে অচলাবস্থা—পেট্রল পাম্পে বন্ধ ধর্মঘটের ডাক, আতঙ্কে দেশজুড়ে জনজীবন

রোববার (আজ) সকাল ৬টা থেকেই সারা দেশের পেট্রল পাম্পগুলোতে বন্ধ রয়েছে জ্বালানি তেল বিক্রি। তেল উত্তোলন ও পরিবহন কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে জ্বালানির প্রবাহ একরকম থেমে গেছে। সকাল থেকে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন, জরুরি সেবায় সংকট এবং কৃষি ও পরিবহন খাতে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এই কর্মসূচি আহ্বান করেছে বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তাদের দাবি—জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমিশন ৭ শতাংশ নির্ধারণসহ মোট ১০টি দফা দাবি বাস্তবায়ন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধর্মঘট আপাতত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। তবে দাবি না মানলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, "এটি শুধুই একটি প্রাথমিক কর্মসূচি। সরকারের নির্লিপ্ত আচরণ চললে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।"

দাবির বিস্তারিত বিবরণ

ঐক্য পরিষদ যে ১০টি দাবির ভিত্তিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন ৭ শতাংশে উন্নীত করা।
বর্তমানে পাম্প মালিকরা কমিশনের হার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। তাদের দাবি, ৭ শতাংশ কমিশন ছাড়া ব্যবসা চালানো অসম্ভব।

২. সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ইজারা ফি পূর্বের হারে বহাল রাখা।
নতুন হারে ইজারা মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ।

৩. সংযোগ সড়কের ইজারায় পে-অর্ডারকে নবায়ন হিসেবে গণ্য করার দাবি।

৪. বিএসটিআই কর্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকের ক্যালিব্রেশন ও ডিপ রড পরীক্ষণের ফি এবং নিবন্ধন প্রথা বাতিল।

৫. পেট্রল পাম্প স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিইআরসি, কলকারখানা পরিদর্শন ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রথা বাতিল।
মালিকদের দাবি, এসব অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল ও হয়রানিমূলক।

৬. বিপণন কোম্পানির বাইরে অন্যদের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করা।

৭. ট্যাংক-লরি চালকদের লাইসেন্স নবায়ন সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে করা এবং নতুন লাইসেন্স সহজে প্রদান।

৮. সব ট্যাংক-লরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট চালু করা।

৯. ঘরের ভেতর বা যত্রতত্র মেশিন বসিয়ে অবৈধ তেল বিক্রি বন্ধ করা।

১০. খোলা জায়গায় অবৈধ মেশিনে জ্বালানি বিক্রির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

দেশজুড়ে তেল সংকট, সেবাখাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

এই ধর্মঘটের ফলে সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক পেট্রল পাম্পে রাত থেকেই গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন, বাস সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়া কৃষিপ্রধান অঞ্চলে ডিজেল না পাওয়ায় সেচ কার্যক্রমে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে কৃষি বিভাগ। অনেক ট্রাক মালিক পরিবহন বন্ধ রেখেছেন আগাম সংকটের আশঙ্কায়।

সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

পেট্রল পাম্প মালিকরা অভিযোগ করেছেন, বারবার দাবি জানানো হলেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে থেকেও তারা ধৈর্য ধরেছিলেন, কিন্তু এখন সময় এসেছে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা চাই সরকার দ্রুত আলোচনায় বসুক। আমরা ব্যবসা করতে চাই, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নয়।”

সামনে কি হতে পারে?

এই আন্দোলন চলমান থাকলে শুধু অর্থনীতি নয়, জনজীবনের সব পর্যায়ে চরম ভোগান্তি নেমে আসবে। পাম্প মালিকদের দাবি অনুযায়ী, সরকার যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তবে দেশে তেলের সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে—সরকার কি তাদের দাবির প্রতি সদয় হবে, নাকি পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে গড়াবে?

Không có bình luận nào được tìm thấy