দীর্ঘ ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এই নির্মম হত্যার বিচার হয়নি। আর এবার যে খবরটি উঠে এসেছে, তা যেন পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে যে, এই হত্যা মামলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা তদন্ত নথিপত্র পুড়ে গেছে আগুনে!
“পুড়ে গেছে”—এই শব্দটা কেবল নথি নয়, জনগণের আস্থা পুড়ে যাওয়ারও প্রতীক
সাম্প্রতিক এক রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,
“মামলার কাগজপত্র, তদন্ত রিপোর্ট, সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সব কিছুই আগুনে পুড়ে গেছে।”
তবে, প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে, কখন, কেন এই আগুন লাগল?
এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারেনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বাসা থেকে খুন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ATN News-এর বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি (চ্যানেল ২৪-এর সিনিয়র রিপোর্টার)-কে।
-
বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল
-
ছুরিকাঘাতে তাদের হত্যা করা হয়
-
হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের শিশু সন্তান ঘরে ঘুমিয়ে ছিল
এই ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের পাশাপাশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেত্রীসহ সব মহল থেকে বিচারের দাবি ওঠে।
প্রথমে থানার পুলিশ, এরপর র্যাব, পরে ডিবি—সবাই একের পর এক তদন্তকারীর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এক যুগেও অভিযোগপত্র তো দূরের কথা, মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।
২০১৪ সালে ডিএনএ পরীক্ষার নাম করে ৮ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের অনেককে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। আজ অবধি প্রমাণসাপেক্ষে কাউকে অভিযুক্ত করা যায়নি।
সাগর-রুনি হত্যার বিচারহীনতা কেবল একটি মামলার গাফিলতি নয়, এটা সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা যদি আজ সাগর-রুনির বিচার না চাই, তাহলে আগামী প্রজন্মের সাংবাদিকরা কাকে দেখে সাহস পাবে?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটা নতুন নয়—ফাইল পুড়ে যায়, প্রমাণ হারিয়ে যায়, সাক্ষী বদল করে, সিসিটিভি “কার্যকর” ছিল না—এসব যেন বিচারকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চিরচেনা কৌশল।
“এই নথি আগুনে পুড়ে গেছে” বলা মানে কি জাতিকে জানান দেওয়া যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চিরতরে চাপা পড়ে গেল?
সাংবাদিক হিসেবে আমরা, এবং একজন নাগরিক হিসেবেও আমাদের এই প্রশ্ন—
-
তদন্ত নথি কীভাবে পুড়ে গেল?
-
দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কি জবাবদিহি থেকে মুক্ত?
-
আগুন লাগার তদন্ত হবে তো?
-
না কি এটা ছিল কারো রচনা করা নাটক?
আমরা বলছি—যে-ই এই ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, তার বিচার চাই। সাংবাদিক পরিচয়ে নয়, মানবিক এবং ন্যায়বিচার চাওয়া এক নাগরিকের অধিকার থেকে।
সাগর-রুনির রক্ত যেন ইতিহাসে হারিয়ে না যায়। বিচারহীনতা যেন ভবিষ্যতের সংবাদকর্মীদের আতঙ্কে পরিণত না করে। আমরা ন্যায় চাই—এবং এখনই চাই।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন