সাফারি পার্কে লুটপাটের মহোৎসব! ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে চলছে দুর্নীতির রঙ্গমঞ্চ


গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এখন দুর্নীতির আখড়া! গাছ পাচার, প্রাণীর মৃত্যুর মিছিল, রাজস্ব ফাঁকি ও ইজারায় দুর্নীতি—সব মিলিয়ে পার্কটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক একসময় ছিল দেশি-বিদেশি প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে এটি দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে ধ্বংসের পথে। অভিযোগ রয়েছে, পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে এখানে চলছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা।
প্রাণীর মৃত্যু ও ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা
সঠিক পরিচর্যার অভাবে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে এই পার্কে।
📌 ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি সিংহ ও একটি ওয়াইল্ডবিস্ট মারা যায়।
📌 ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহ প্রাণ হারায়।
📌 ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর একটি পুরুষ জিরাফ মারা যাওয়ায় প্রজনন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
📌 ২০২১ সালে তিনটি ক্যাঙারু মারা যাওয়ার পর থেকে পার্কটি ক্যাঙারুশূন্য হয়ে পড়ে।
এছাড়া, একসময় যেখানে লেকগুলোতে ব্ল্যাক ও হোয়াইট সোয়ানদের দেখা মিলত, এখন সেখানে একটিও অবশিষ্ট নেই! মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এসব ঘটনার তদন্ত করলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
গাছ পাচার ও বন উজাড়—কে থামাবে এই চক্র?
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর পিকআপ ভর্তি গাছ পাচার করা হয়। কর্মচারীরা জানান, এই গাছ পাচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সহায়তায় নির্বিচারে বন উজাড় করে কোটি কোটি টাকার গাছ পাচার করা হচ্ছে।
ভাওয়ালের শালবনের ৩,৮১০ একর জায়গার মধ্যে একসময় ছিল ঘন বৃক্ষরাজি। কিন্তু বর্তমানে গাছ কেটে বিক্রি করায় পুরো বন হুমকির মুখে পড়েছে।
রাজস্ব ফাঁকি ও ইজারার নামে দুর্নীতি
পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইজারার মাধ্যমে পরিচালনার কথা থাকলেও বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে পার্কের কোটি কোটি টাকার ইজারার বকেয়া জমে আছে।
🔹 প্রতি বছর পার্কের গেট ও কোর সাফারি থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, বন বিভাগ রহস্যজনকভাবে ইজারা না দিয়ে নিজেরাই পরিচালনার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে।
🔹 বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন ইজারাদারের কাছে প্রায় ৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে, যা আদায়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
🔹 জেলা প্রশাসকের রাজস্ব আদালতে মামলা করা হলেও তা কার্যকর হয়নি, বরং দুর্নীতি আরও বেড়েছে।
প্রাণীদের খাবারেও চলছে দুর্নীতি!
পার্কের প্রাণীদের খাবার সরবরাহ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সঠিক খাবার না পাওয়ায় প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কর্তৃপক্ষের অসংলগ্ন বক্তব্য
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,
"এখানে আমার কোনো আত্মীয় নেই, আমি এলাকার গরিব ছেলেপেলেদের কাজ দিয়েছি।"
গাছ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন,
"এটা ঠিক নয়, মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে হয়তো কিছু বের হয়।"
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি বর্তমানে বিদেশ সফরে রয়েছেন। অপরদিকে, বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বর্তমানে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
দেশের অন্যতম সাফারি পার্ক ধ্বংসের পথে
সরকার প্রতি অর্থবছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এখন শুধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রাণীদের মৃত্যুর মিছিল, বন উজাড়, রাজস্ব ফাঁকি এবং অনিয়মের মাধ্যমে পার্কটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এই পার্ক অস্তিত্ব সংকটে পড়বে!
Tidak ada komentar yang ditemukan