যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি প্লট হস্তান্তরের অভিযোগ
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সরকারি প্লট অবৈধভাবে তার বোনের কাছে হস্তান্তর করার অভিযোগ এনেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তদন্তে জানা গেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে নোটারি পাবলিকের সই জাল করেছিলেন।
এই বিষয়টি প্রথমে রিপোর্ট করেছে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম "ফিন্যান্সিয়াল টাইমস"। শুক্রবার (১৪ মার্চ) তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন এবং এই প্লট তিনি পরবর্তীতে তার বোনকে হস্তান্তর করেছেন।
দুদকের অভিযোগ অনুসারে, এই সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ভুয়া নোটারি পাবলিক ব্যবহৃত হয়েছিল এবং নোটারি পাবলিকের সইও জাল করা হয়েছিল। সঠিক আইনজীবীর সই থাকার কথা থাকলেও, যিনি সই দিয়েছেন তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি এ ধরনের কোনো নথিতে সই করেননি এবং তার নাম জাল করে ব্যবহার করা হয়েছে।
দুদক জানায়, এই তদন্তের পর তারা টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, টিউলিপ সিদ্দিক তার পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সরকারি প্লটের মালিক হয়েছেন এবং নিয়ম ভেঙে ওই প্লটটি নিজের এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন।
এই বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্লট বরাদ্দের শর্তাবলি অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার পূর্বাচলে জমির জন্য যোগ্য নন, কারণ তার ইতিমধ্যে শহরের একটি সম্পত্তি রয়েছে। তবুও, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা শর্ত লঙ্ঘন করে সেই প্লট পেয়েছেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে, দুদক আরও জানায়, তারা টিউলিপ সিদ্দিকের গুলশানের ফ্ল্যাট বোন আজমিনা সিদ্দিককে হস্তান্তর করার ক্ষেত্রেও ভুয়া নোটারি পাবলিক ব্যবহার করার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এই হেবা দলিলটি, যা সম্পত্তি উপহারের জন্য ব্যবহৃত হয়, ২০১৫ সালে তৈরি হয়েছিল এবং তখন টিউলিপ লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য হলেও মন্ত্রিত্ব পাননি।
দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, "শেখ হাসিনার পরিবার এবং তাদের সম্পর্কিতদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এবং আমরা এগুলোর তদন্ত করছি।" তিনি আরও বলেন, "এছাড়া টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোও বিচারিক পর্যায়ে উঠবে।"
এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে তার রাজনৈতিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্কিতদের কাছ থেকে এই ধরনের সম্পত্তি গ্রহণ করেছেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে বিষয়টি তাকে রাজনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
গত বছর আগস্টে, বাংলাদেশে একটি বিশাল রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন শেষ হয়। এরপর থেকেই তার পরিবার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, বিশেষত সরকারি প্লট গ্রহণ এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে।
এখন দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং তারা আশাবাদী যে এই অভিযোগগুলোর বিচার হবে।