close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক অশান্তির বিস্ফোরণ হতে পারে: জাতিসংঘে বাংলাদেশের সতর্কবার্তা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতিসংঘে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে তা শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোর ব..

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় এক ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন: রোহিঙ্গা সংকট আর শুধু মানবিক ইস্যু নয়—এটি এখন অর্থনীতি, পরিবেশ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ে বাংলাদেশের চরম চাপ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তুলে ধরেন, ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু সংকটের দীর্ঘসূত্রিতার ফলে এই বিশাল বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী এখন বাংলাদেশের উপর অপূরণীয় অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করছে।

তিনি স্পষ্ট করেন, এই সমস্যা যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে এটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলতে পারে। শুধু শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থাপনা নয়, এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি—এমন কথাই বারবার তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষায়, এটা শুধু বাংলাদেশের একার লড়াই নয়; এটি বৈশ্বিক মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রশ্ন।

তারুণ্যের প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন—বাংলাদেশের তরুণরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলন—সবক্ষেত্রেই অগ্রভাগে থেকেছে। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করেন, যদি এই তরুণ জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যায়, তাহলে তারা সহজেই চরমপন্থায় জড়িয়ে পড়তে পারে

এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, "দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়ন ঘাটতি চলতে থাকলে তা সমাজে সহিংসতা ও অস্থিরতা ডেকে আনতে বাধ্য।"

বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিদ্যমান বৈষম্য প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের 'তিনটি শূন্য' নীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ—এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারলেই পৃথিবী হতে পারে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল।

তাঁর মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া একসূত্রে বাঁধতে হবে, তবেই এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতিসংঘকে পরামর্শ দেন—‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেল বিবেচনায় আনার জন্য। এই মডেল বিশেষ করে গরিব, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং সংঘাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মত দেন।

তৌহিদ হোসেন তার বক্তৃতায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির কথা বলেন। তার মতে, শান্তি ও উন্নয়ন যদি একে অপরের পরিপূরক হয়, তবেই তা হবে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক।

রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নেই—এটি এখন এক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সরব ও জোরালো অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—আর সময় নেই, এবার পদক্ষেপ নিতে হবে।

Keine Kommentare gefunden