যশোর রেস্ট হাউসে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীসহ অবস্থান করে বিতর্কে জড়ালেন ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের হানা, ভিডিও ভাইরাল, শেষমেশ ওসি প্রত্যাহার।
যশোরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীকে নিয়ে অবস্থান করায় তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম। ঘটনাটি সামনে আসার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ছাত্রদল নেতারা তাঁকে রুম থেকে বের করে এনে আবার জোর করে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে ওসি সাইফুল ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয় এবং গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
সূত্র মতে, ৩০ জুন সন্ধ্যায় যশোর পাউবোর পুরাতন রেস্ট হাউসের ‘কপোতাক্ষ’ নামক একটি কক্ষে ওঠেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে থাকা নারীকে তিনি স্ত্রী পরিচয়ে পরিচয় দেন। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে তাঁরা রেস্ট হাউসে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের যশোর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি তার অনুসারীদের নিয়ে রেস্ট হাউসে উপস্থিত হন।
সেসময় ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে ওসি সাইফুল ইসলাম বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন তাঁকে ঘিরে ধরে ছাত্রদল নেতারা, এবং পরবর্তীতে টানাহেঁচড়া করে আবার রুমের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাগবিতণ্ডা, ধস্তাধস্তি এবং ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে বলে জানা যায়। রেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, "ওসি সাহেব নিজেই এসে বলেছিলেন তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করবেন। তাই আমরা কক্ষ বরাদ্দ দিই।
এই ঘটনা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এবং ভিডিও ক্লিপ মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। এক পর্যায়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মনজুর মোর্শেদ জানান, “ওসি সাইফুল ইসলামকে ৬ জুলাই রাতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি যশোরে ব্যক্তিগত সফরে ছিলাম। সঙ্গে আমার নারী বন্ধু ছিল, কিন্তু কোনো অনৈতিক কিছু ঘটেনি। ছাত্রদল নেতারা এসে কিছু কথা বলে চলে যায়। এরপরই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু হয়।
অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা গোলাম হাসান সনি বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে আমরা খবর পাই যে রেস্ট হাউসে অসামাজিক কাজ হচ্ছে। তাই আমরা যাই। কিন্তু আমরা কোনো নারীকে দেখি নাই।
এ ঘটনায় যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, রেস্ট হাউসের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ঝিনাইদহ পাউবোর চিঠির ভিত্তিতে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্তে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনা যেভাবে সামনে এসেছে তাতে একের পর এক প্রশ্ন উঠেছে—একজন দায়িত্বশীল থানার ওসি কীভাবে এ ধরনের কাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন? ভিডিও ফুটেজ, ছাত্রদলের অভিযোগ এবং ওসির বক্তব্য—তিনটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে এই ঘটনা। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত শেষে বাস্তব চিত্র কী বেরিয়ে আসে।