close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফ তার আই ভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জে রাতভর জনতার বাধা, মসজিদের মাইকিং, পুলিশের অভিযান—সবকিছু পেছনে ফেলে সকালে গ্রেফতার হলেন সাবেক মেয়র আইভী। বাড়ির ফটকে জনতার ঢল, আর বিদায়ের মুহূর্তে মুখে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। কেন ..

নারায়ণগঞ্জ যেন একরাতের জন্য রূপ নেয় রাজনৈতিক উত্তেজনার শহরে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকে শুরু হয় নাটকীয় অভিযান। কেন্দ্রবিন্দুতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। রাতভর জনতার প্রতিরোধ, পুলিশের উপস্থিতি, মসজিদের মাইকিং, সব কিছুর পর অবশেষে শুক্রবার (৯ মে) ভোরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার শুরু রাত সাড়ে ১১টার দিকে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একটি পুলিশ টিম হঠাৎ করেই চুনকা কুটিরে, আইভীর দেওভোগের বাড়িতে হানা দেয়। গ্রেফতারের খবরে মুহূর্তেই চারদিক থেকে ছুটে আসে হাজারো মানুষ। বাড়ির সামনের রাস্তায় পড়ে যায় ঠেলাগাড়ি, বাঁশ আর মানুষের অবরোধ। কেউ স্লোগান দিচ্ছে, কেউ পুলিশকে ঠেকাতে মানবপ্রাচীর গড়ছে। সেইসাথে এলাকার মসজিদগুলো থেকে ঘোষণা—"সবাই রাস্তায় নামুন, আইভী আপাকে রক্ষা করুন।"

জনতার এই প্রতিরোধে পুলিশ প্রথমে পিছু হটে। পরিস্থিতি শান্ত করতে জেলা পুলিশের আরেকটি দল এলেও জনগণের দৃঢ় অবস্থানে তারা মূল ফটকে ঢুকতে পারেনি। পরে অনেক অনুরোধ-উপস্থাপনার পর পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘটনার অদ্ভুত দিক হচ্ছে, বাড়িতে প্রবেশ করা পুলিশ সদস্যদের আপ্যায়ন করা হয় চা ও বিস্কুট দিয়ে। এ যেন গ্রেফতার নয়, রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়।

ডা. আইভী স্পষ্ট জানিয়ে দেন—রাতে গ্রেফতারে তার আপত্তি আছে। "আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি বাড়িতে আছি। দিনের আলোতে, সবার সামনে আমাকে নিয়ে যান,"—এমনই ছিল তার বক্তব্য।

ফজরের নামাজের পর, সকাল পৌনে ৬টার দিকে, আইভী গ্রেফতার হন। তার মুখে ছিল দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত একটি বার্তা, যেটি রাতভর উত্তেজনার চূড়ান্ত প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে—
“আমি চুনকার মেয়ে। আমার বাবা সাম্যের রাজনীতি করেছেন। যদি ‘জয় বাংলা’ বলার কারণে অপরাধী হই, তবে আমি সেই অপরাধে গর্বিত। ২১ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে আছি। ত্বকী হত্যাকাণ্ডসহ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আমি আওয়াজ তুলেছি, প্রতিবাদ করেছি। আজ আমাকে কেন গ্রেফতার করা হলো? কোন ষড়যন্ত্রের শিকার আমি? জনগণের কাছে এর জবাব চাই।”

তিনি আরও বলেন,
“বৈষম্যবিরোধী রাজনীতি যারা করছে, তারাই আজ বৈষম্যের উদাহরণ সৃষ্টি করছে। আমি কি দুর্নীতিবাজ? আমি কি পলাতক? তাহলে রাতের আঁধারে আমাকে কেন গ্রেফতার করতে হলো?”

এই বক্তব্যের পর তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে উঠেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যাসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “আইভীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই।”

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ গ্রেফতার শুধু একটি মামলার পরিণতি নয়—এ যেন রাজনৈতিক রূপান্তরের এক শুরু। একদিকে ‘জয় বাংলা’ মুখে নিয়ে গ্রেফতার হওয়া সাবেক মেয়র, অন্যদিকে জনগণের ঢল—সবমিলে নারায়ণগঞ্জ এখন এক অস্থিরতা ও প্রশ্নে মোড়া শহর।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator