ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মোড় নিতে চলেছে। এবার রাশিয়ার পাশে সরাসরি যুদ্ধ করতে আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠাতে চলেছে উত্তর কোরিয়া। মস্কোর সঙ্গে দিন দিন বাড়তে থাকা সম্পর্কের জেরে এশিয়ার এই রাষ্ট্র রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধের ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানাচ্ছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক গোপন মূল্যায়নে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া আগামী মাসগুলোতে রাশিয়ায় অতিরিক্ত ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার পক্ষে সম্মুখ সারির সেনাবাহিনীর শক্তি তিনগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রথম নয়। এর আগেও ২০২৪ সালের নভেম্বরে উত্তর কোরিয়া প্রায় ১১ হাজার সৈন্য রাশিয়ায় পাঠিয়েছিল, যারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় হামলা ঠেকাতে সহায়তা করেছিল। তখন থেকেই পিয়ংইয়ং-মস্কো সহযোগিতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও গত এপ্রিলের শেষ দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের ধাপে পাঠানো সৈন্যদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন। এরপরেও উত্তর কোরিয়া আরও বেশি সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে।
সিএনএন-এর হাতে আসা ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধ ইউনিটগুলোকে আরও একীভূত করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহে সক্ষম।
তবে এখানেই শেষ নয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা সরাসরি রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনের অংশে রাশিয়ান সেনাদের সঙ্গে যৌথভাবে ‘বৃহৎ আক্রমণাত্মক অভিযানে’ অংশ নিতে পারে।
সিএনএন আরও জানায়, রাশিয়ান সামরিক বিমানগুলোকে কর্মী বহনের জন্য পুনঃসজ্জিত করা হচ্ছে এবং স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, নতুন সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার এই গভীর সামরিক সহযোগিতা কেবল ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেই এক নতুন উদ্বেগজনক দিক উন্মোচন করছে। রাশিয়ার সেনা সংকটে উত্তর কোরিয়ার এই হস্তক্ষেপ শুধু যুদ্ধের সময়কালই বাড়াবে না, এটি অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও জড়িয়ে ফেলতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে।
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার এই যৌথ অবস্থান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ আর কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তৃতীয় পক্ষের সরাসরি অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করছে এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্তের।