চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতবর্ষী গাছ নিধনের ঘটনায় বিদ্যালয় ও পরিবেশ উভয়েই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা পরিচালিত এ কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়েছে এবং ডিপ টিউবয়েলও হুমকির মুখে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন অভিযোগ করেন, "কিছু কুচক্রী মহল নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের বন্ধের দিনে গাছগুলো কেটে নেয়। আমাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।"
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সাবেক ইউএনও মাহমুদুল হাসান একটি নিলামের মাধ্যমে মাত্র ১,৩৬,৫০০ টাকার বিনিময়ে গাছ কাটার অনুমতি দেন। এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল বলেন, "আমি নিলাম থেকে গাছ কিনেছি, তবে বিদ্যালয়ের গাছ কাটা উচিত হয়নি। এখানে চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা জড়িত।"
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চারপাশে সবুজ প্রকৃতির যে পরিবেশ ছিল তা এখন শ্মশানের মতো হয়ে গেছে। এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমাদের বিদ্যালয়ে যে গাছগাছালির পরিবেশ ছিল, এখন তা দূষিত স্থান মনে হচ্ছে।"
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সভাপতি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "বর্তমান যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে, সেখানে শতবর্ষী গাছ কাটা অগ্রহণযোগ্য।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর কাজী বরকত বলেন, "গাছ পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা জীববৈচিত্র্য ও মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বনাঞ্চল সংকুচিত হচ্ছে যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।"
এদিকে, "গাছ কাটার আইন ২০২৪" পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের ধারায় নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই আইনে ব্যক্তিগত ও সরকারি জমিতে গাছ কাটার নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরফভাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জেলা বোর্ড, চট্টগ্রাম এর নামে রেকর্ড হয়েছিল। তবে দীর্ঘ ১১৮ বছর পর জেলা পরিষদ এই জমি তাদের বলে দাবি করছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে জেলা পরিষদ পাহাড় কেটে মার্কেট নির্মাণ করলে বিদ্যালয়ের ভবন ধসে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্থানীয়রা অনুরোধ করেছেন যে, যারা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।