রাজপথে ‘টোলঘর’ খুলেছে বাইদানিরা: জগন্নাথপুর রোডে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি
সুমন হাওলাদার
ঢাকার রাজপথে যেন নতুন এক নিয়ম চালু হয়েছে—পথে চলতে হলে ‘টোল’ দিতে হবে। তবে এই টোল সরকার নির্ধারিত নয়, আদায় করছে ‘বাইদানি’ নামে পরিচিত এক চাঁদাবাজ চক্র। রাজধানীর যমুনা গেট সংলগ্ন জগন্নাথপুর রোডে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে চলছে এ চাঁদাবাজি। অথচ প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকায়।
প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি
এই চক্রের সদস্যরা নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৬-৭ জনের দল গঠন করে। তারা পথচারীদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “দশ টাকা দে।” কেউ অস্বীকার করলে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হুমকি-ধমকি। তাদের প্রধান টার্গেট নারীরা।
ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা:
> “আমি বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ এক মহিলা এসে দাঁড়াল, ‘দশ টাকা দে’। বললাম, ভাংতি নেই। সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন বলল, ‘১০০ টাকা দে, আমরা ভাংতি দিচ্ছি।’ আমি দিলাম... তারপর আর আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি।”
— বসুন্ধরার এক গৃহিণী
প্রতিদিন শত শত পথচারী এই অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না, আবার কেউ ভয়ে চুপ করে থাকেন।
কারা এই ‘বাইদানিরা’?
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাইদানি একটি অর্ধসাংগঠনিক গোষ্ঠী। এদের সদস্যরা মূলত শহরের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আসে। তারা প্রতিদিন ভোরে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে দাঁড়ায়। নারী সদস্যরা সামনের সারিতে থেকে চাঁদা তোলে, আর পুরুষরা দূরে থেকে নজরদারি করে।
> “তারা সংখ্যায় কম না, আর তাদের পেছনে নাকি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকও আছে,”
— নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পথচারী
প্রশাসন কোথায়?
এই প্রশ্ন এখন এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং প্রশাসনের নীরবতা চক্রটিকে যেন আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। এ চাঁদাবাজি এখন শুধুই কোনো একটি সড়কের সমস্যা নয়—এটি শহরের সামগ্রিক নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইনের শাসনের উপর সরাসরি আঘাত।
প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ না থাকলে, সাধারণ মানুষ কাকে দেখে ভরসা করবে?