close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাজবাড়ীতে মাদক-সন্ত্রাসের ভয়াল থাবা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবকের প্রতিবাদ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাজবাড়ীতে মাদক-সন্ত্রাসের থাবায় মৃত্যুপুরীতে রূপ নিচ্ছে এলাকা। প্রশাসনের নীরবতার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ালেন এক তরুণ সাংবাদিক—“রাজবাড়ী বাঁচাও” দাবিতে একাই দিলেন প্রতিবাদের ডাক।..

রাজবাড়ী এখন মৃত্যুপুরী। প্রতিদিন যেন দুঃস্বপ্নে জর্জরিত এই জেলা। মাদকের ভয়াল ছায়া, খুনের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস, আর সহিংসতার জাল রাজবাড়ীকে গিলে ফেলছে ধীরে ধীরে।
একে একে হারিয়ে যাচ্ছে এলাকার নিরীহ মানুষ, গুম হচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্ম। আর এসব দেখে-শুনেও চুপ প্রশাসন।

সেই নীরবতা ভাঙতে এগিয়ে এসেছেন সরদার রাজিব, ঢাকায় কর্মরত এক তরুণ গণমাধ্যমকর্মী। বুধবার (৩ জুলাই), রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একাই দাঁড়িয়ে নিজের জেলার পক্ষে প্রতিবাদ জানান তিনি। তার প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো—"রাজবাড়ী বাঁচাও, তরুণ প্রজন্ম বাঁচাও। 

রাজিবের আহ্বান:আমার প্রিয় রাজবাড়ী আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, মাদক ও চুরি—কোন কিছুই বাদ নেই। অথচ প্রশাসন দায়সারা অভিযান চালিয়ে লোক দেখানো কাজ করছে। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে।

রাজিবের মতে, আজ যে ক্ষয় রাজবাড়ীকে ঘিরে ধরেছে, তা শুধু মাদকের কারণেই নয়—এর পেছনে রয়েছে প্রশাসনের নিরবতা, স্থানীয় গডফাদারদের রক্ষা করার অসৎ রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং নৈতিকতার ধস।

শুধু ২০২৫ সালের জুন মাসেই রাজবাড়ী জেলায় নথিভুক্ত হয়েছে ৫টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড:

  1. ১১ জুন, কালুখালীতে অটোরিকশাচালক আসলাম খুন হন দুর্বৃত্তদের হাতে।

  2. ২০ জুন, বালিয়াকান্দিতে স্বামীর হাতে খুন হন গৃহবধূ মনিরা।

  3. ২২ জুন, দৌলতদিয়ায় মাদক বিরোধে প্রাণ হারান নজরুল।

  4. ২৪ জুন, যৌনপল্লিতে শ্বাসরোধে খুন হন তানিয়া।

  5. ২৫ জুন, নিখোঁজের দুই দিন পর দাদশী থেকে উদ্ধার করা হয় যুবক আদরের লাশ।

এই রকম খুনের ধারাবাহিকতা যেন আতঙ্কের উপাখ্যান হয়ে উঠেছে রাজবাড়ীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়।

বিশেষ করে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লি এখন মাদকের অভয়ারণ্য। এখান থেকেই ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ছে চরাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরতলী, গ্রাম, হাট-বাজার পর্যন্ত।

  • পোড়াভিটা

  • লোকোসেড

  • পাচুরিয়া

  • বাগমারা

এইসব এলাকা আজ ভয়ানকভাবে মাদকের দাপটে বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই মিলছে গ্রেপ্তারের খবর, কিন্তু মূল গডফাদারদের নাগাল পাচ্ছে না প্রশাসন।

রাজিব বললেন,আমি শুধু একা দাঁড়াইনি। আমি দাঁড়িয়েছি আমার জেলার পক্ষে, আমার মা-বোনদের নিরাপত্তার জন্য। তরুণ প্রজন্ম মাদকে ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। রাজবাড়ী যেন আরেক নরক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তিনি সরকার ও রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন,যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, রাজবাড়ীর ভবিষ্যৎ চরম অন্ধকার। প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে, বড় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

রাজবাড়ীর স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনৈতিক সচেতন মহল একমত—রাজবাড়ীর বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিন্তু এখনই যদি জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাহলে হয়তো রক্ষা পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

দাবি উঠছে:

  • গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা

  • যৌনপল্লি ঘিরে মাদকবিরোধী স্থায়ী অভিযান

  • স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা

  • তরুণদের জন্য মাদক নিরোধক সচেতনতামূলক কার্যক্রম

রাজবাড়ীর আজকের এই অবস্থান এক তরুণ সাংবাদিকের প্রতিবাদ দিয়ে শুরু হলেও, এটি রাজবাড়ীর মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও আর্তির বহিঃপ্রকাশ।
যদি রাষ্ট্র এখনই না জাগে, কাল রাজবাড়ী সত্যিই হয়ে উঠবে এক মৃত্যুপুরী—যার ইতিহাসে থাকবে শুধু চোখের জল আর গুমরে কাঁদা প্রজন্ম।

Keine Kommentare gefunden