close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাজা শ্রী বীরেন্দ্রনাথের জগদল জমিদার বাড়ি

আব্দুল্লাহ আল নোমান avatar   
আব্দুল্লাহ আল নোমান
****

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও।। 

রাণীশংকৈল উপজেলা শহর থেকে ২৩ কি.মি দূরে কাশিপুর ইউনিয়নের বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের সাথে জগদল নামক স্থানে রাজা শ্রী বীরেন্দ্রনাথের জগদল জমিদার বাড়ির অবস্থান। উপজেলা শহর থেকে ১৫ টাকা ভাড়ায় চার্জার ভ্যান ও অটো চার্জারে করে প্রথমে নেকমরদ চৌরাস্তায় নামতে হয় তারপর নেকমরদ চৌরাস্তা থেকে অটো চার্জার ও ভ্যান রিজার্ভ করে জগদল জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়। জগদল গ্রামে রয়েছে তীরনই ও নাগর নদীর মিলনস্থল যাকে মোহনা বলা হয়, যা বাংলাদেশের খুব কম জায়গায় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে জমিদার বাড়ির পাশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্প এবং প্রাচীনতম কালীমন্দির। এ জমিদার বাড়িটিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় একাধিক স্থাপত্যিক কাঠামো দেখা যায়। লতাপাতা ও বৃক্ষরাজিতে ঘিরে থাকা এ জমিদার বাড়ির স্থাপনার মধ্যে বসতঘর, মন্দির, সীমানা প্রাচীরসহ প্রবেশ তোরণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ইট, চুন, কাঠ ও লোহার বর্গা দিয়ে নির্মিত এ জমিদার বাড়ির স্থাপত্যিক কাঠামোসমূহে সমতল ছাদ, তুস্কান স্তম্ভ, অর্ধ—বৃত্তাকার খিলান এবং আস্তরের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। জমিদার বাড়ির স্থাপনাসমূহ এখন প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি। জমিদার বাড়িটির সম্ভাব্য নির্মাণ কাল উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। বর্তমানে জমিদার বাড়িটি প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। জমিদার বাড়ি খেকে প্রায় ১০০ মিটার পশ্চিমে নদীর পাড়ে মন্দির ছিল যা আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই নেই। জগদলের রাজকুমার ছিলেন শ্রী বীরেন্দ্রনাথ । তাঁর সঙ্গে তৎকালীন ভারতের বাকীপুরের জমিদার রায় পূর্ণেন্দু নারায়ন সিংহের পুত্র শ্রী নলিনি রঞ্জনের কনিষ্ঠা কন্যা শ্রী মতি আশালতা দেবীর বিয়ে হয়। শ্রী বিরেন্দ্র নাথ সুশিক্ষিত ছিলেন। বই এর প্রতি ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ। এ কারণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সমৃদ্ধ পাঠাগার। ততকালীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ—বর্তমান দিনাজপুর সরকারী কলেজে ১৯৪৮ সালে তার পাঠাগারের বইগুলো দান করা হয়। যার মূল্যমান ধরা হয় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। শোনা যায়, এই জমিদারবাড়িতে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ কাটিয়েছিলেন তার ছেলেবেলার কিছু সময়, যার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে ২০১৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল হুমায়ূন মঞ্চ। বর্তমানে সেটি অরক্ষিত রয়েছে। জানা গেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মেহেদী হাসান শুভ'র মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিটের মাধ্যমে ২০২৪ সালে গেজেট হয়। গেজেট হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। জগদল জমিদার বাড়ি থেকে আধা কি.মি দক্ষিণে গড়ে তোলা হয়েছে নাগর নদী ভিউ পয়েন্ট। ভারত সীমান্তে সন্ধ্যার সময় সীমান্ত পিলারের লাইটিং আরো আকর্ষণীয় করে তোলে জায়গাটিকে। প্রতিদিন বিকেল হলে আশপাশের শত শত মানুষ ভিড় জমান এমন দৃশ্য দেখার জন্য। রাণীশংকৈল উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ চায় এই জমিদারবাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার যেন সব ধরনের সহযোগিতা করে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলে কালের সাক্ষী হিসেবে থাকা জমিদারবাড়িটি লোকচক্ষুর অগোচরে বিলীন হয়ে যাবে।

No comments found