রাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও, ৯ দফা দাবি শিক্ষার্থীদের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আবাসন, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা-সহ ৯ দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের নীরবতায় উত্তাল ক্যাম্পাস, ঘেরাও করা হয়েছে প্রশাসনিক ভবন।..

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এখন উত্তাল শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে। দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যাগুলোর সমাধান না পেয়ে অবশেষে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার, ২৯ জুন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানেই তারা স্পষ্ট ঘোষণা দেন—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, প্রয়োজনে হবে আরও কঠোর কর্মসূচি।

শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সারাংশ:
১. পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা
২. পরীক্ষায় রোলবিহীন খাতা মূল্যায়ন এবং খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ
৩. ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
৪. মেডিকেল সেন্টারকে ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করা
৫. প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল এবং অনলাইনভিত্তিক করা
৬. হল ডাইনিংয়ে মানসম্মত খাবারের জন্য সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা
৭. কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন
৮. পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) কার্যকর করা
৯. রাকসুর পূর্ণাঙ্গ তফসিল দ্রুত প্রকাশ করা

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এসব দাবির ব্যাপারে বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কার্যত কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা ও উদাসীনতা শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

সমাবেশে সাবেক আন্দোলন সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, "এই ৯ দফা কেবল আমাদের চাওয়া নয়, বরং রাবির টিকে থাকা এবং সম্মান রক্ষার প্রশ্ন। এগুলো বাস্তবায়ন করতে সদিচ্ছা থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু প্রশাসনের নির্লিপ্ত আচরণ আমাদের বাধ্য করেছে রাজপথে নামতে। এখন আর পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দাবি মানতে হবে।"

ইসলামি সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, "প্রশাসন যদি আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে না নেয়, তবে আমরা এই আন্দোলন আরও জোরালো করব। আমরা আর সময় নষ্ট করব না। প্রয়োজনে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে পিছপা হব না।"

বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের কণ্ঠে মুখর ছিল একের পর এক প্রতিবাদী স্লোগান—

  • “আপস না সংগ্রাম, আমাদের দাবি আমাদের অধিকার”

  • “সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”

  • “গড়িমসি চলবে না, প্রশাসনের ঘুম ভাঙাতে হবে”

  • “হল আমার অধিকার, কেড়ে নিতে দেব না আর”

এই দাবিগুলোর মধ্যে ছাত্রাবাসের সংকট, চিকিৎসাসেবা ও নিরাপত্তার অভাব সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে যে পরিবেশ থাকা উচিত, রাবিতে তার ঘাটতি চরমে। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

আন্দোলনকারীরা প্রশাসনকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—আর নয় আশ্বাস, চাই বাস্তবায়ন। দাবি মানতে হবে, নইলে আন্দোলন চলবেই, তীব্রতর হবে।

এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—কীভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ভর করছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের ওপর।

এই আন্দোলন কেবল দাবি আদায়ের লড়াই নয়, বরং একটি সুস্থ, নিরাপদ এবং মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশের জন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও সময়োপযোগী সংগ্রাম। প্রশাসনের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, না হলে পরিস্থিতি হতে পারে আরও জটিল ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

Tidak ada komentar yang ditemukan