close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

পুলিশ বলছে, নওশেদ শ্রমিক লীগের নেতা, স্ত্রীর দাবি তিনি জামায়াত করেন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রামে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে চাঁদা না দেওয়ায় ‘মব’ তৈরি করে মারধর ও পুলিশে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রী বলছেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ফাঁদ। ভেতরের..

চট্টগ্রামে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামাল। তাকে পুলিশে তুলে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে জোর বিতর্ক দেখা দিয়েছে, উঠছে নানা প্রশ্ন। স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাতের অভিযোগ, নওশেদকে একটি পরিকল্পিত ‘মব’ তৈরি করে চাঁদার দুই কোটি টাকা না দেওয়ার কারণে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই চক্রান্তের নেপথ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নিজাম উদ্দিন ও কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ এলাকায়। নওশেদ যখন তার কর্মস্থল মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অফিসে যাচ্ছিলেন, তখনই একদল ব্যক্তি তাকে আটক করে মারধর শুরু করে এবং পরে কোতোয়ালি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

শনিবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন রিয়াজুল জান্নাত। সেখানে তিনি বলেন, “আমার স্বামী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন রুকন এবং বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। তাকে টার্গেট করা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাকে ফাঁসানোর নানা কৌশল নেয়া হয়।

অভিযোগপত্রে জান্নাত উল্লেখ করেন, পতেঙ্গা ইস্টার্ন কেব্‌লস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে বসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তার স্বামীকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায়, আগ্রাবাদে তার স্বামীকে রাস্তা থেকে ধরে ১০–১৫ জনের একটি গোষ্ঠী মারধর করে এবং কোতোয়ালি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

জান্নাতের দাবিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে, তিনি একটি ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে নিজাম উদ্দিনকে একটি কক্ষে বসে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওতে তিনি বলেন, “আপনার যার প্রতি ক্ষোভ, ওই তিনজনকে হলেই তো হইছে... দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন।

এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, একটি চক্রান্তই ঘটেছে।

তবে নিজাম উদ্দিন ফেসবুকে একটি পোস্টে দাবি করেন, ওই ভিডিওটি চার–পাঁচ মাস আগের এবং এটি পতেঙ্গা থানার এলাকার। তার দাবি, “ভিডিওতে কোথাও টাকা দাবি করা হয়নি। পুরো বিষয়টি ষড়যন্ত্র, আমি কোনো চাঁদা চাইনি। বরং আমি ওসিকে বলেছি, যদি নওশেদ আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে ব্যবস্থা নেন, না হলে ছেড়ে দিন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেই বা পুলিশ কমিশনার তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকেন।

অন্যদিকে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আব্দুল করিম বলেন, “আমি টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে।

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের একাধিক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের আগস্টে শ্রমিক লীগের বেশিরভাগ নেতা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। সেই সুযোগে নতুন গ্রুপগুলো কর্তৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে নওশেদ জামালকে রাজনৈতিকভাবে বিপাকে ফেলা হয় বলে ধারণা।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষ্কার যে, এটি শুধু একটি ব্যক্তি বা সংগঠনের দ্বন্দ্ব নয়—বরং এর পেছনে জটিল রাজনৈতিক খেলা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থও জড়িত। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করে কি না, নাকি এই অভিযোগও হারিয়ে যাবে রাজনৈতিক বলয়ের জটিলতায়।

No comments found