নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা। শনিবার (৩১ মে) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রকাশ্যে হাতাহাতির ঘটনায় সরগরম হয়ে ওঠে প্রশাসনিক ভবন।
এই ঘটনা ঘটে আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ বাজার সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর ইজারাকে কেন্দ্র করে। কেন্দ্রীয় বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের অনুসারী আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক এবং জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল আমিন ভূঁইয়ার অনুসারী ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মৃধা—এই দুই পক্ষই হাট বসানোর দখল নিতে চায়।
ইজারা ও প্রতিশ্রুতি ঘিরেই উত্তেজনার সূত্রপাত
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গত ২১ মে ইজারা পান রফিকুল ইসলাম। তিনি পশ্চিম পাশে বালুর মাঠে হাট বসানোর প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, ইজারা না পাওয়া মনিরুজ্জামান পূর্বের জায়গা আমিরগঞ্জ স্কুলপাড়া এলাকায় হাট বসানোর উদ্যোগ নেন।
এই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা উভয় পক্ষকে একত্রে আলোচনার জন্য উপজেলা কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আলোচনার বদলে সেখানে শুরু হয় উচ্চবাচ্য এবং এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, কারো দায় স্বীকার নয়
মনিরুজ্জামান মৃধার ভাষ্য মতে, “আমরা আটজন একসাথে টেন্ডার জমা দিয়েছিলাম। পরে বিএনপির সিনিয়রদের মধ্যস্থতায় তা প্রত্যাহার করি। তখন বলা হয়েছিল যিনি ইজারা পাবেন, সবাইকে অংশীদার করবেন। কিন্তু সেই কথা রক্ষা করা হয়নি। যখন আমরা পূর্বের জায়গায় হাট বসানোর উদ্যোগ নিই এবং ইউএনও অফিসে হাজির হই, তখন প্রতিপক্ষ হামলা চালায়।”
অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম বলেন, “পূর্বের জায়গায় প্রায়ই পানি জমে থাকে, তাই নতুন বালুর মাঠে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিই। তবে কার্যালয়ে শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে, হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান চাই।”
ইউএনওর হুঁশিয়ারি: “অবিশৃঙ্খলা হলে ১৪৪ ধারা”
ঘটনার বিষয়ে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, “উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কথা কাটাকাটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। বিষয়টি এখন উপজেলা বিএনপির সিনিয়রদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা যেন শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়।”
তিনি আরও বলেন, “যদি হাট বসানো নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তাহলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে হাট বন্ধ করে দেবে। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার, ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল—এই তিনটি উপাদান একত্র হয়ে রায়পুরার পশুর হাটকে পরিণত করেছে রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সামনে কোরবানির ঈদ, ফলে প্রশাসনের কড়া নজরদারি না থাকলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।