বাংলাদেশে বৈধভাবে আন্তর্জাতিক শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস) আদান-প্রদান না হওয়ায় প্রতিবছর ২০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু এসএমএস নয়, আশঙ্কাজনক হারে কমেছে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গত বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ ১১৬ কোটি ৫৩ হাজার মিনিট কমে গেছে, এবং চলতি অর্থবছরে এটি আরও ৩০০ কোটি মিনিটে পৌঁছাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থার জন্য মূলত অবৈধ কল ও মেসেজ টার্মিনেশনে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকা, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরদের আয়-ব্যয়ের হিসাব না নেওয়া এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়াই দায়ী। এর ফলে, সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বিপদ।
বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, অবৈধ কল টার্মিনেশন, আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়া এবং বৈধ পথে এসএমএস না আসাসহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “যেসব কোম্পানির কাছে বকেয়া পাওনা আছে, সেসব পাওনা আদায় করা হবে। কিছু সেক্টরে অতিরিক্ত লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কাটছাঁট করা হবে।”
বর্তমানে, বাংলাদেশে প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক এসএমএসের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি, যা মূলত অবৈধ পথেই আসছে। বিটিআরসির কোনো স্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার, ইমোসহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে, সাধারণ কল কমে গেছে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বিপুলভাবে কমেছে।
২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ কমেছে। ২০২১-২২ সালে আন্তর্জাতিক আগমনি কলের পরিমাণ ছিল ৮৪৭ কোটি ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৩৫৮ মিনিট, যা পরবর্তীতে ২০২২-২৩ সালে কমে ৭৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার ২৯৫ মিনিটে পৌঁছেছে। একইভাবে, বহির্গামী কলও কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, আন্তর্জাতিক কলের কমে আসার অন্যতম কারণ হলো, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইমো সহ ওটিটি অ্যাপের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অবৈধ ভিওআইপি প্রযুক্তি দ্বারা কল পরিচালনা। এর ফলে, আইজিডব্লিউ অপারেটররা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এদিকে, আইজিডব্লিউ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক এসএমএস পরিচালনার জন্য সরকার যদি অনুমতি দেয়, তবে তা প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে পারে, যা বর্তমান রেভিনিউ থেকে প্রায় ৯ গুণ বেশি।
শেষে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকার যদি কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়, তবে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিপুল উন্নতি হতে পারে এবং রাজস্ব ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			