প্রতি বছর সড়কে মৃ ত্যু ১২ লাখের কাছাকাছি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলাদা নিরাপত্তা আইন ছাড়া এই মৃত্যুমিছিল থামানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশেও ঝুঁকি বাড়ছে দিন দিন।..

বিশ্বজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দিন দিন চরমে পৌঁছাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে দুইজনেরও বেশি মানুষ হারাচ্ছেন তাঁদের জীবন — শুধু সড়কে।

রবিবার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উদ্যোগে আয়োজিত একটি বিশেষ মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান সংস্থাটির রোড সেফটি প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল: সড়ক নিরাপত্তা আইন সকলের জন্য প্রয়োজন”।

বিশ্বব্যাপী রোডক্র্যাশজনিত মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। শারমিন রহমান জানান, মৃত্যুর ৯২ শতাংশই এই দেশগুলোতে ঘটছে। এর মধ্যে পথচারী, সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকেরাই সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারাচ্ছেন — যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। এই প্রবণতা শুধু একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, বরং একটি আর্থসামাজিক সংকট।

বিশ্বের ১৮৩টি দেশের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম — যা বিশেষজ্ঞদের মতে উদ্বেগজনক। কারণ বাংলাদেশে যানবাহন বৃদ্ধির হারের তুলনায় নিরাপত্তা অবকাঠামো বা ব্যবস্থাপনা এখনও ভয়ানকভাবে পিছিয়ে।

আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞ ও আলোচকরা একমত হয়েছেন যে, বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত পরিবহন খাতকেন্দ্রিক। এতে দুর্ঘটনা রোধ বা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় দিকগুলো পর্যাপ্ত গুরুত্ব পায়নি।

বিশেষ করে যে বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে:

  • সড়ক অবকাঠামো ও যানবাহনের ডিজাইন ও নিরাপত্তা

  • পথচারীসহ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা

  • দুর্ঘটনার পর জরুরি চিকিৎসা ও রেসকিউ ব্যবস্থাপনা

  • সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপনকালে বলেন, “বর্তমান সড়ক আইন ও বিধিমালা পরিবহন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট হলেও দুর্ঘটনা রোধ বা ব্যবস্থাপনায় এটি কার্যকর নয়।”

তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ৫টি দিক তুলে ধরেন, যা একটি আদর্শ সড়ক নিরাপত্তা আইনে থাকা উচিত:

  1. বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা

  2. নিরাপদ যানবাহন নিশ্চিতকরণ

  3. নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো

  4. নিরাপদ সড়ক ব্যবহার

  5. দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পাঁচ দিককে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে প্রতিবছর আরও প্রাণ ঝরে যাবে এই রক্তাক্ত সড়কে।

আলোচকরা বলেন, আইন থাকলেই হবে না, তার কঠোর প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে—বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহার, পথচারীদের সঠিক পারাপার, চালকদের ট্রাফিক আইন মানার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৩,২০০ জন মানুষ প্রাণ হারান সড়কে। এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক এবং কার্যকর আইন, কঠোর প্রয়োগ, সঠিক অবকাঠামো এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। বাংলাদেশের জন্য সময় এসেছে একটি আলাদা, আধুনিক ও সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ বাস্তবায়নের।

コメントがありません