নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈধ অস্ত্র বহনের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। একাধিকবার হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ায় তিনি জানান, অস্ত্র রাখাটা তার জন্য শুধু বৈধই নয়, বরং প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়ও।
রবিবার গভীর রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তিনি লেখেন, “নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আমার কাছে সরকারের অনুমোদিত লাইসেন্স করা বৈধ একটি অস্ত্র আছে। গণ-অভ্যুত্থানকে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে কয়েক দফা জীবননাশের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে সরকারি প্রটোকল বা সিকিউরিটি না থাকলে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় এটি আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মরক্কোর মারাকেশে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম’-এ অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আমার ফ্লাইট ছিল আজ ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে। ব্যস্ততায় ভোরে ব্যাগ গোছানোর সময় একটি ম্যাগাজিন ভুলক্রমে ব্যাগে থেকে যায়, যদিও অস্ত্র ও একটি ম্যাগাজিন রেখে গেছি বাসায়। স্ক্যানিংয়ের সময় ব্যাগে থাকা ম্যাগাজিনটি ধরা পড়ে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমার প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করি।”
আসিফ মাহমুদ এ ঘটনাকে পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত বলেই দাবি করেন। তিনি লেখেন, “এই ঘটনার পেছনে কোনো প্রকার উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু একটি ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করব? যদি আমার উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে অস্ত্র রেখে আসতাম না। মানুষ চাইলেই বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
এই প্রসঙ্গে তিনি একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলেন— নিউজ সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ করেননি। তিনি জানান, “ঘটনার পর আমরা টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টার ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে নেমে দীর্ঘ সময় পর অনলাইনে এসে দেখি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে। বাস্তবতা হলো, আমি কাউকে চাপ দেইনি। সংবাদ যেভাবে হয়েছে, হয়েছে। বরং এর মধ্যে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “নাগরিক হিসেবে যদি আপনারও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, তাহলে আপনি আইনের পরিপন্থী কিছু না করে যথাযথভাবে সরকারের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারেন। এটা সবার নাগরিক অধিকার।
আসিফ মাহমুদের এই পোস্টটি সামনে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ তাকে সমর্থন করছেন নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে, আবার কেউ বলছেন— জনপরিচিত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আরও সতর্ক আচরণ প্রত্যাশিত।
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, দায়িত্বশীল নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ যখন অস্ত্র বহনের সিদ্ধান্ত নেন, সেটা অবশ্যই আইন মেনে হতে হবে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় রাখতে হবে। ভুলবশত হলেও এরকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।
ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও, আসিফ মাহমুদের বক্তব্যে একটি বার্তাই পরিষ্কার— নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হওয়া অপরাধ নয়, তবে সতর্কতা থাকা আবশ্যক। কেবল একটি ম্যাগাজিন বহনের ঘটনা হলেও সেটি যেন আর কারও ভুল ব্যাখ্যায় বিতর্কের জন্ম না দেয়, সে ব্যাপারে তিনিও যথেষ্ট সচেতন বলেই জানিয়েছেন।