প্রেমিকের অপেক্ষায় বেড়েছে বয়স, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ১৪ বছরের প্রেমের পর বিয়ে না করায় প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন এক নারী। প্রেমিক পলাতক, মোবাইল বন্ধ। প্রেমিকার ঘোষণা—বিয়ে না হলে আত্মহত্যা করবেন। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।..

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ঘটেছে চাঞ্চল্যকর এক প্রেমের নাটক। ১৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক, বিয়ের প্রতিশ্রুতি, দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং শেষে প্রতারণা—সবকিছুর পর প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অনশন শুরু করেছেন এক হতাশ প্রেমিকা। দাবিটা একটাই—“বিয়ে করো, নয়তো আমার মরদেহ ঘরে যাবে!

ঘটনাটি কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের ইটাছকি গ্রামে। প্রেমিক আলিম উদ্দিন (৩৫) পেশায় প্রবাসফেরত, বর্তমানে নিখোঁজ। তার মোবাইল ফোন বন্ধ, পরিবারের কেউ জানেন না তার অবস্থান। প্রেমিকার দাবি, প্রেমিক আলিম দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রেমিকার এই অনশন ঘিরে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আলোড়ন।

বুধবার (২৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই নারী প্রেমিক আলিম উদ্দিনের বাড়ির সামনে অনশনরত অবস্থায় বসে আছেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি গত সোমবার (২৩ জুন) বিকেল থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। অনশনরত প্রেমিকা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা ১৪ বছর ধরে প্রেম করি। সে আমাকে বিয়ের কথা বলে বহু বছর সময় কাটিয়েছে। আমি তার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। এমনকি বয়সও পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন সে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখছে না। ঈদের আগে দেশে ফিরলেও বিয়ের কথা বললেই সে হঠাৎ করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

তার অভিযোগ, আলিমের পরিবার সম্পর্কটিকে স্বীকার করছে না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি প্রেমিকের বাড়িতে এসে বসে পড়েছেন। অনশনকারী প্রেমিকা কাঁদতে কাঁদতে জানান, “সে যদি আমাকে বিয়ে না করে, তাহলে আত্মহত্যা করব।

ইটাছকি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল হোসেন, জালাল উদ্দিন এবং আকলিমা বিবি বলেন, “দুই দিন ধরে মেয়েটি ছেলের বাড়িতে এসে বসে আছে। সে কাঁদে, কিছু খায় না, শুধু বলে—বিয়ে না করলে মরব।

প্রেমিকার বড় ভাই চন্দন বলেন, “আমার বোন ১৪ বছর ধরে একটা ছেলের আশায় আছে। এখন যদি সে প্রতারণা করে, আমরা কী করব? আমরা চাই প্রশাসন এবং এলাকার মানুষ এর সুষ্ঠু বিচার করুক।

প্রেমিক আলিম উদ্দিনের বড় ভাই ইসলাম উদ্দিন বলেন, “ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে, এটা আমাদের জানা ছিল না। হঠাৎ মেয়েটি বাড়িতে চলে আসায় সবাই অবাক হয়েছি। তবে আমার ভাই যদি ওকে মেনে নেয়, আমাদের আপত্তি নেই। তবে ঘটনাটির পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, তাও দেখতে হবে।

নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সারোয়ার জাহান কাওছার বলেন, “আমি দুই পক্ষের সাথেই কথা বলেছি। ছেলের পরিবার সময় চেয়েছে। আমরা চাই বিষয়টা শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা হোক।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “আমি ঘটনাটি এখন শুনলাম। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছে, প্রেমিক প্রতারণা করেছে। কেউ বলছে, পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কেউ সন্দেহ করছে, এর পেছনে হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ সক্রিয়।

যা-ই হোক, ১৪ বছরের সম্পর্ক আর এক নারীর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়—এই দায় কি সহজে ফেলা যায়? প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ আর সামাজিক চাপের মুখে কি শেষ পর্যন্ত এই প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন হবে? নাকি অনশনই হয়ে উঠবে শেষ চিৎকার?

Geen reacties gevonden