close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

প্রধান উপদেষ্টাকে যেসব দাবি জানিয়ে এলেন মান্না-সেলিম-সাকিরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নির্বাচনের রোডম্যাপ, আইনের শাসন, মানবিক করিডর ও বিদেশি প্রভাব নিয়ে মুখোমুখি আলোচনা—প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনার পেছনের কারণ জানালেন রাজনৈতিক নেতারা। গণআন্দোলন নস্যাৎ ও ভারতীয় আধিপত্য নিয়েও উঠলো গুর..

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সন্ধ্যার আলোচনায় উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাতাবরণ।
রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, নির্বাচন, আইন-শৃঙ্খলা ও মানবিক করিডর ইস্যুতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে অংশ নেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।

এই আলোচনাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় এক ধরনের কৌতূহল, কারণ দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়ে ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভ জমছিল বিভিন্ন দলগুলোর মধ্যে।


প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনার নেপথ্যে কী?

বৈঠক শেষে আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূস মনে করেছিলেন—নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি না হওয়ায়, তিনি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না এবং এ কারণে পদত্যাগের কথাও চিন্তা করেছিলেন। তবে মঞ্জুর মতে, ড. ইউনূস আশ্বস্ত করেছেন যে, একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার পরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এছাড়া, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর দল জোর দাবি জানায়।


গণঅভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গণআন্দোলনের জোয়ার ঠেকাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে নানা ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। “মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু কোন মত গ্রহণযোগ্য তা নির্ধারণ করবে জনগণই”—এমন মন্তব্য করে তিনি নির্বাচনকালীন সংস্কারের তাগিদ দেন। তাঁর মতে, সময়ক্ষেপণ হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে।


ভারতীয় প্রভাব নিয়ে সতর্কতা

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের অর্জনকে সহ্য করতে পারছে না। সুযোগ পেলে একদিনেই সবকিছু ধ্বংস করে দেবে।” এ সময় তিনি সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান, যাতে এই হুমকি মোকাবিলা করা যায়।


প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থার বার্তা

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বৈঠকে উল্লেখ করেন, গেলো ক’দিনের রাজনৈতিক পরিবেশ প্রধান উপদেষ্টাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে, ফলে তিনি পদত্যাগ বিবেচনা করেন। তবে সাইফুল হক বলেন, “মাঝনদীতে মাঝি বদলালে নৌকা ডুবে যেতে পারে”—এই বক্তব্যের মাধ্যমে দলগুলোর পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা প্রকাশ করা হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ আচরণ অনুপস্থিত। “এক সরকারের ভেতরে যেন আরেকটি সরকার না থাকে”—এই বার্তা স্পষ্টভাবে দেন তিনি।


নির্বাচনের রোডম্যাপ ও ন্যায়বিচারের দাবি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ড. ইউনূসের প্রতি বিভিন্ন মহলের অনাস্থা বাড়ছে। নির্বাচনের আগে এই বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, “জনগণ চায় বিচার হোক—এবং সেই বিচার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই হোক।” পাশাপাশি তিনি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়ে বসেন। উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা জানান, সরকারও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝছে এবং যথাযথ প্রস্তুতির পরই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা আসবে।


 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূসের এই বৈঠক নিঃসন্দেহে নির্বাচনী পথনকশার দিক নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে আলোচনার মাধ্যমে আস্থা পুনর্গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনিক প্রস্তুতি ছাড়া এই পথ সহজ হবে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। ভবিষ্যতের রাজনীতি কোন পথে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

कोई टिप्पणी नहीं मिली