২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল একটি অন্ধকার অধ্যায়। সেই রক্তাক্ত ইতিহাসে নতুন করে নাড়া দিল জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। বুধবার (২৫ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশন জানায়, এই হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল অ্যান্ড মেটালার্জি (বিআরআইসিএম) ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেন,আমরা তদন্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কারো নাম প্রকাশ করছি না।
কমিশন আরও জানায়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় তৎকালীন সরকার যথাযথ সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে প্রাণহানি বহুগুণ বেড়ে যায়।
সাবেক মেজর জেনারেল বলেন,যদি সময়মতো সেনা অভিযান হতো, তাহলে বহু প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সেনা হস্তক্ষেপে দেরি হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন,তৎকালীন তদন্ত কমিটি এই ঘটনায় চরম অবহেলা দেখিয়েছে। এমনকি কিছু গণমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
স্বাধীন তদন্ত কমিশন এই পর্যন্ত ১৫৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছে, বাকি রয়েছে আরও ৫০ জনের সাক্ষ্য।
চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা মির্জা আজম ও জাহাঙ্গীর কবীর নানক ইতোমধ্যেই লিখিত সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা বর্তমানে পলাতক থাকলেও কমিশন নিশ্চিত করেছে, তাদের সাক্ষ্য তদন্তে মূল্যবান সূত্র দিচ্ছে।
এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহ ছিল না, বরং এর পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রভাব। যদিও এখনো কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে কমিশনের বক্তব্য বলছে, তৎকালীন সরকার বা ক্ষমতার আশপাশে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।
কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর পরবর্তী ধাপে জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হতে পারে।
আলাদাভাবে কমিশন সুপারিশ করতে যাচ্ছে একটি “বিশেষ ট্রাইব্যুনাল” গঠনের, যাতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিচারাধীন হতে পারে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড এক ভয়াবহ কলঙ্ক। এতদিন ধরে সেটি আড়ালে থাকলেও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে আসছে আসল মুখোশ উন্মোচনের সময়।
রাজনীতির রক্তাক্ত অধ্যায় এখন আরও জোরে প্রশ্ন তুলছে— কাদের সিদ্ধান্তে ঝরে গিয়েছিল ৭৪ সেনা সদস্যের প্রাণ?