অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেই ভূমিকম্প: পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় ড. ইউনূস?
রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহযোগিতাহীনতায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তার পদত্যাগের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত।
সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। শুরুতে এক ঘণ্টার জন্য নিয়মিত আলোচনা হয়, যেখানে সরকারি সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে মূল নাটকীয়তা শুরু হয় সচিবরা বেরিয়ে যাওয়ার পর, যখন প্রধান উপদেষ্টা প্রায় চার ঘণ্টা অনির্ধারিত বৈঠক করেন শুধুমাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে।
‘এইভাবে আর দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়’ — ইউনূসের হাল ছাড়ার বার্তা!
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আলোচনার শুরুতেই ড. ইউনূস সোজাসাপ্টা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তিনি প্রতিশ্রুত সহযোগিতা পাননি। তিনি বলেন, “সবাই মুখে বলেছিল সহযোগিতা করবে, সংস্কারের পর নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন সেই রাজনৈতিক দলগুলোই সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “নির্বাচনের ওপর নানা রকম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে কোনো ইস্যুকে টেনে নির্বাচনী বিতর্কে পরিণত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন চাই না এবং এমন নির্বাচনের দায়ও নিতে রাজি নই।”
বিকেলে ছড়িয়ে পড়ে পদত্যাগের গুঞ্জন, রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন
এই আলোচনা বিকেলে গিয়ে এক নতুন মোড় নেয়। বিকেল ৪টায় বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় সরকারের কাছ থেকে। না হলে সহযোগিতা সম্ভব নয়—এই বার্তা দেয় দলটি। এরপর বিকেল ৫টায় জামায়াতে ইসলামী দলীয় বৈঠকে বসে এবং সর্বদলীয় সভা আহ্বান করার আহ্বান জানায় ড. ইউনূসকে।
রাজনৈতিক নেতাদের রাতের ছুটোছুটি, গভীর রাতে আরও আলোচনা!
পরে সন্ধ্যায় বিষয়টি আরও ঘনীভূত হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যমুনায় গিয়ে দেখা করেন ড. ইউনূসের সঙ্গে। প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা বেরিয়ে আসেন।
অন্যদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গিয়েছেন নাকি আলাদা করে—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
‘ডিসেম্বর থেকে জুন—এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন, তারপর আমি থাকবো না’
বৈঠকে ড. ইউনূস পরিস্কার করে বলেন, “আমি আগেও বলেছি, জুনের পর একদিনও আমি এই পদে থাকবো না। কিন্তু সবাই যেন আমার ওপর আস্থা হারিয়েছে।” তিনি বলেন, “নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয়, তাহলে আমার আজীবনের সুনাম, আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও নোবেলজয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। আমি এমন কলঙ্কের অংশ হতে চাই না।”
অসহযোগিতার দায়ে ক্ষুব্ধ ইউনূস, আন্দোলনে ক্ষুব্ধ জনগণ
ড. ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের আহ্বানে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তখন দলগুলো বলেছিল—“আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন।” কিন্তু এখন তারা নিজেরাই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, রাস্তা অবরোধ করছে, মানুষের জীবনে অস্থিরতা আনছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন—“এই সরকার কি কেবল গালি খাওয়ার জন্য থাকবে?”
শেষ কথা: ইউনূস কি সত্যিই পদত্যাগ করবেন?
এখন প্রশ্ন—ড. ইউনূস কি আসলেই পদত্যাগ করছেন? সরকার ও রাজনৈতিক অঙ্গন এই প্রশ্নে বিভক্ত। যদিও তিনি স্পষ্টভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেননি, তবে তার বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ না থাকলে, এই নোবেলজয়ীর পক্ষে সরকারের প্রধান হিসেবে টিকে থাকা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে একথা নিশ্চিত—এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়।
[আপডেটেড নিউজ - সময়: ২২ মে, রাত ১১টা]
এই প্রতিবেদনটি লিখে শেষ করার সময়েও প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টা হবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।