লালমনিরহাটের নদনদীগুলোর তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও নদীর গভীরতা সমতল ভূমি থেকে দুই-তিন ফুট। অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে। এতে সেচ সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষক ও মৎস্যজীবীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, লালমনিরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ১৩টি নদী। এসব নদীতে একসময় থাকত থইথই পানি। নদীর বুকে চলত পাল তোলা নৌকা।
ব্যবসাবাণিজ্য চলত নদীকেন্দ্রিক। নদীতে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত লক্ষাধিক মানুষ। নদীর পানি দিয়েই চলত সব ধরনের চাষাবাদ। কিন্তু কালক্রমে নদী ভরাট হয়ে পানি শুকিয়ে গেছে।
স্থান ভেদে সমতল ভূমি থেকে নদীর গভীরতা এখন দুই থেকে তিন ফুট। আর তিস্তা নদীতে বর্তমানে পানি প্রবাহ সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে। বন্ধ হয়ে গেছে নদীকেন্দ্রিক ব্যবসাবাণিজ্য, চাষাবাদ আর পানি না থাকায় দুর্দিন চলছে মৎস্যজীবীদের। তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতী, সানিয়াজান, সাঁকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহিনী, স্বতী, গিরিধারী, ছিনাকাটা, ধলাই, ভেটেশ্বরসহ ১৩টির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। পলি জমে ভরাট হয়ে নদী তার স্বকীয়তা হারিয়েছে।
কালের পরিক্রমায় সেসব নদীর বুকে এখন ঋতুভিত্তিক নানা ফসল চাষ হয়। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একসময় নদী ছিল। শুধু বড় বড় সেতু দেখে ধারণা করা যায় এসব জায়গায় একসময় খরস্রোতা নদী ছিল। বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, দুই যুগ আগেও নদীর বুকে পাল তোলা মালবোঝাই বড় বড় নৌকা চলাচল করত। প্রচুর মাছও পাওয়া যেত। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত জেলেরা। এখন মাছ নেই বললেই চলে। ফলে দুর্দিন চলছে জেলে সম্প্রদায়ের।
তিস্তাপাড়ের কৃষক মোজাম্মেল হক, ধীরেন্দ্রনাথ রায়, রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে নদীর পানি দিয়েই চাষাবাদ হতো। কিন্তু এখন নদীতে পানি না থাকায় চাষাবাদ করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আর গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের মাধ্যমে খরচ পড়ে যায় অনেক। ফসল উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দাম কমে যাওয়ায় আমরা লোকসানের মুখে পড়ি। তাছাড়াও ভরাট নদীগুলো খনন না করায় বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির কারণে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীগুলোর পলি অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায় বলেন, ১৩টি নদীই পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদী খনন জরুরি।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তাসহ অন্যান্য নদী রক্ষায় সরকার দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কোনো অবস্থাতেই এ জেলাকে মরুভূমি হতে দেওয়া যাবে না।