পাকিস্তানে স্কুলবাসে ভয়াবহ হামলা: শিশুহত্যার নেপথ্যে ভারতের ষড়যন্ত্র?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বেলুচিস্তানের খুজদারে স্কুলবাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণ—নিহত অন্তত পাঁচজন, আহত বহু। পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় ষড়যন্ত্রেরই ফল এই নির্মম শিশু হত্যাকাণ্ড।..

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বুধবার সকালটা রক্তাক্ত এক দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। খুজদার জেলার একটি স্কুলবাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচজন, যাদের মধ্যে রয়েছে তিনটি শিশু। আহত হয়েছে আরও অনেকে, যাদের মধ্যে বহুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভয়াবহ এই ঘটনার পেছনে ভারতের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর।

রক্তাক্ত সকাল, কাঁদছে বেলুচিস্তান

স্থানীয় সময় সকালবেলা খুজদার জেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় একটি স্কুলবাস ছাত্রছাত্রীদের বহন করে যাচ্ছিল। আচমকাই ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। মুহূর্তেই রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে রক্তাক্ত দেহ, আর্তনাদে মুখরিত হয় বাতাস।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে বিভীষিকাময় সেই মুহূর্ত

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “বাসটি যখন জিরো পয়েন্টের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে আমরা কেঁপে উঠি। ছুটে গিয়ে দেখি বাসের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, শিশুরা কান্নাকাটি করছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা।”

আহত ও নিহতদের পরিচয়

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিস্ফোরণে তিন শিশু এবং আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছে স্কুলের শিক্ষক, চালক এবং আরও অন্তত ৩৮ জন শিক্ষার্থী। গুরুতর আহতদের খুজদার থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কোয়েটা এবং করাচিতে পাঠানো হয়েছে।

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (ISPR) এক বিবৃতিতে জানায়, “বেলুচিস্তানে ভারতের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত এটি আরেকটি কাপুরুষোচিত ও ভয়াবহ হামলা। নিরীহ স্কুলগামী শিশুদের টার্গেট করে এই বর্বরতা চালানো হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়ে এখন ভারত এই ন্যাক্কারজনক পন্থা অবলম্বন করেছে—বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। খুজদারের ডেপুটি কমিশনার ইয়াসির ইকবাল দাস্তি জানান, “বিস্ফোরণের পর দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু হয়। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো হয়।”

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যারা নিরীহ শিশুদের ওপর আক্রমণ করে, তাদের মানবতার কোনও জায়গায় স্থান নেই। এই বর্বর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ

এখনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায়নি, তবে শিশুদের লক্ষ্য করে এমন সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যখন দুটি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ—ভারত ও পাকিস্তান—এর মধ্যে এমন হুমকি-ধমকি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলে, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

উপসংহার: শান্তির পরিবর্তে সংঘাত?

বেলুচিস্তানে স্কুলবাসে হামলার মতো নির্মম ঘটনাগুলো পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। রাজনীতি, কূটনীতি কিংবা সীমান্ত সংঘর্ষ—সবকিছুর মধ্যে একবারে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিষ্পাপ শিশুরা। এই ট্র্যাজেডি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সন্ত্রাস কখনও জাত, ধর্ম বা বয়স দেখে না। নিরীহ শিশুদের রক্তে রঞ্জিত এই পৃথিবী যেন একটুখানি শান্তির আশ্রয় খুঁজছে।

לא נמצאו הערות