পাক-চীন-আফগান বৈঠকে ভারতের গায়ে শীত কাঁ টা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চীনের মাটিতে গড়ে উঠছে পাক-চীন-আফগানিস্তান ত্রিপক্ষীয় বন্ধুত্বের নতুন মঞ্চ। আর সেই দৃশ্যপটে ভারত কোথায়? আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে কি বড় ধাক্কা খেতে চলেছে দিল্লি?..

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ফের জমে উঠেছে উত্তেজনার পারদ। কূটনৈতিক অঙ্গনে যেন নীরব যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর তার কেন্দ্রে এবার চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বহুল আলোচিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। আজ সোমবার চীনের বেইজিংয়ে বসছে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে মুখোমুখি হচ্ছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী। এ বৈঠক শুধু তিন দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রচেষ্টাই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বহন করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠার পর আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং চীনের সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাঝে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৈঠকে মূলত আলোচনা হবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে।

চীন সফরের সময় ইসহাক দার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এরপর মঙ্গলবার তাঁর আফগান প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করার কথা রয়েছে। বৈঠকের উদ্দেশ্য পরিস্কার: আফগানিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘নতুন মিত্র’ হিসেবে গড়ে তোলা এবং ভারতকে এ অঞ্চলে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা।

এরই মধ্যে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকী ২০ মে চীনে পৌঁছেছেন। তার আগেও, গত ১০ মে কাবুলে অনুষ্ঠিত একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে একমত হয়েছিল এই তিন দেশ। সেই বৈঠকে আফগানিস্তানের পক্ষে অংশ নেন মুত্তাকী, পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক এবং চীনের হয়ে উপস্থিত ছিলেন আফগান বিষয়ক বিশেষ দূত ইউ সিয়াওইয়ং। ওই বৈঠকের পর মোহাম্মদ সাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (পূর্বতন টুইটার) লিখেছিলেন, “এই বৈঠক তিন দেশের জন্যই নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

তবে প্রশ্ন উঠছে—এই নতুন ত্রিপক্ষীয় মিত্রতায় ভারতের স্থান কোথায়? আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে যেন ভারত কিছুটা পেছনে পড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার তালেবান-ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দিল্লির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতো নয়। তার ওপর চীন ও পাকিস্তানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মে আফগানিস্তানের সক্রিয় অংশগ্রহণ দিল্লির জন্য এক প্রকার কূটনৈতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিল্লির সরকারি পর্যায়ে এখনো এই বৈঠক নিয়ে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া না এলেও, ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে একরকম উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে হলে ভারতের কৌশলগত অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের এই ত্রিপক্ষীয় সংহতি শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তা নয়, বরং বৃহত্তর অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর (BRI) অংশ হিসেবে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ভারত আরও একবার চাপে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কূটনৈতিক মহল।

এই মুহূর্তে ভারত যদি আঞ্চলিক রাজনীতিতে নেতৃত্ব ধরে রাখতে চায়, তবে তাকে কেবল প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বসে থাকলে চলবে না। প্রয়োজন, সক্রিয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করা সম্ভব হবে।

অন্যথায়, দক্ষিণ এশিয়ায় যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, তা ভারতকে অনেকটাই একাকী করে তুলতে পারে—এবং সেটাই সম্ভবত চীন-পাকিস্তানের যৌথ কূটনীতির মূল লক্ষ্য।

لم يتم العثور على تعليقات