কিশোরগঞ্জ, শনিবার:
চার মাসেরও বেশি সময় পর খোলা হলো দেশের অন্যতম আলোচিত দানবাক্স—কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। প্রত্যাশামতো এবারও জমা পড়েছে কোটি কোটি টাকা, দেশি-বিদেশি মুদ্রা এবং স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কার। তবে এইবার যে জিনিসটি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে, তা হলো কিছু অদ্ভুত, বেনামি চিরকুট। যার মধ্যে দুটি চিরকুট সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
একটিতে লেখা, “ড. ইউনূস স্যারকে আরও পাঁচ বছর চাই। আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও”—চিঠিটির প্রেরক নাম ‘সাধারণ জনগণ’। অন্য একটি চিরকুটে লেখা, “পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়?”। দুইটিই বেনামি। তবে এগুলোর ভাষা এবং প্রেক্ষাপট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে হাস্যরস, তর্ক-বিতর্ক ও বিশ্লেষণ।
১১টি দানবাক্স থেকে উঠে এল ২৮ বস্তা টাকা
আজ শনিবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার কার্যক্রম। মসজিদের মোট ১১টি দানবাক্স একযোগে খোলা হয় এবং প্রতিবারের মতো এবারও তৈরি হয় চোখ ধাঁধানো চিত্র। দানবাক্সগুলো থেকে পাওয়া গেছে মোট ২৮ বস্তা টাকা। পাশাপাশি প্রচুর দেশি ও বিদেশি মুদ্রা এবং স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারও উঠে আসে।
টাকা গণনার কাজে অংশ নেয় প্রায় ৪০০ জনের একটি দল, যার মধ্যে ছিলেন মসজিদ কমিটির সদস্য, এতিমখানার ছাত্র, শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন। এই মহা গণনার কাজে যে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল নজরকাড়া।
চিরকুটের রাজনৈতিক রং?
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিরকুটগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একদিকে যেখানে ড. ইউনূসের পক্ষে আরও পাঁচ বছরের সময় চাওয়ার মতো বক্তব্য, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম নিয়ে লেখা ‘পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়?’ চিরকুটটি যেন আলাদা করে প্রশ্ন তোলে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “চিরকুট পাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারের বিষয়বস্তু একটু ভিন্ন। এতে সামাজিক দৃষ্টিকোণ, ধর্মীয় আবেগ এবং রাজনীতির মিশ্র প্রতিচ্ছবি রয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ এটিকে নিছক মজা মনে করছেন, আবার কেউ বলছেন—“জনগণ এখন মসজিদের দানবাক্সেও তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছে।”
প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা
পাগলা মসজিদে দানবাক্স খোলার সময় প্রচুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনির সদস্যরা। সেইসাথে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার এবং রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারিসী।
দানবাক্স খোলার সময় পুরো মসজিদ চত্বর ছিল কঠোর নজরদারির মধ্যে। এমনকি, চিরকুট পাওয়া নিয়েও সংশ্লিষ্টরা খুব সতর্ক। কারা এই চিরকুট লিখেছে, কী উদ্দেশ্যে দিয়েছে—তা নিয়ে তদন্তের পরিকল্পনাও করা হতে পারে।
শেষ কথা
চিরাচরিত দানবাক্স থেকে কোটি টাকার হিসাব পাওয়া গেছে—এটাই নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারের এই দুটো চিরকুট যেন সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এটি শুধু হাস্যরসের খোরাক নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার একটি প্রতিফলন হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
এখন দেখার বিষয়—আসন্ন সময়ে এই ধরণের চিরকুট আরও পাওয়া যায় কি না, কিংবা প্রশাসন বা রাজনৈতিক মহলে এর কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় কি না।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			