বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে এক অভূতপূর্ব দাবি উঠে এসেছে—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন দেশের নানা স্তরের সাধারণ নাগরিকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, এটি নিছক কোনো উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও বঞ্চনার প্রতিফলন।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত মন্তব্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনায় উঠে এসেছে একটাই সুর—আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন নাগরিক প্রকাশ্যে বলেন,
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। কারণ এই সরকারের প্রথম সংস্কারই ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আমরা চাই সরকার তার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুক। এই দলটিকে নিষিদ্ধ না করলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
এই বক্তব্য শুধু একজনের নয়—এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক অনুভূতির প্রতিধ্বনি।
আরেকজন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন,
২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যে অপরাধমূলক রাজনীতি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। হত্যা, গুম, দমন, দুর্নীতি, ভোট ডাকাতি—সবকিছুতেই তারা জড়িত। একটি রাজনৈতিক দলের নামে যদি ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে সেই দল গণতন্ত্রের অংশ হতে পারে না। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।”
এই দাবি যেন শুধুই অতীতের বিচার নয়, এটি ভবিষ্যতের নিরাপত্তা রক্ষারও অনুরোধ।
একজন ধর্মপ্রাণ নাগরিক আরও একধাপ এগিয়ে বলেন,
আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, এরা ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করেছে। দাড়ি, টুপি, হেফাজতের অনুসারীদের গুম করেছে। ইসলামের পক্ষে কথা বললেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ক্ষমা করা যায় না। এই দলটিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
এই সব মন্তব্যের পেছনে রয়েছে গত দেড় দশকে ঘটে যাওয়া বহু আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে রাজনৈতিক বিরোধীদের ফাঁসি, ব্লগার হত্যা, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ভয়াবহ অভিযোগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মত প্রকাশের স্বাধীনতার দমন—সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের খাতা দীর্ঘ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,
এধরনের দাবি মূলধারার আলোচনায় স্থান পেতে শুরু করেছে বলেই এটি আর অবজ্ঞা করার মতো কোনো বিষয় নয়। এক বিশ্লেষক বলেন,
আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর ঢুকে পড়েছে। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠা মানে শুধুই সরকারের সমালোচনা নয়—এটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রশ্ন।”
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি এখন এক অজানা রাজনৈতিক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছেন, এই দাবি বাস্তবায়ন হলে দেশের রাজনীতি ফ্যাসিবাদ মুক্ত হবে, কেউ বা এটিকে বিপজ্জনক পথ বলছেন।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—
বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন চাইছে। তারা অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়, একটি নতুন দিগন্তের সূচনা চায়। সেই সূচনায় যদি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণই প্রথম পদক্ষেপ হয়, তাহলে সেটাই হয়তো হবে ইতিহাসের চাহিদা।