প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির সাথে সাথে দ্রুত বদলে যাচ্ছে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের ধরন। একসময় ডেটা এন্ট্রি, ক্যাপশন লেখা বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে যে পরিমাণ আয়ের সুযোগ ছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর উত্থানের ফলে তা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, ২০২৫ সালে কোন দক্ষতাগুলো আপনাকে অনলাইনে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করতে পারে, তা নিয়ে সম্প্রতি এক ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তরুণ স্পিকস। তিনি অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন উপায়কে চারটি ভিন্ন ভাগে ভাগ করে এর কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কাজ এখন এতটাই স্বয়ংক্রিয় বা AI-নির্ভর হয়ে পড়েছে যে, সেগুলোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাপশন বা সাবটাইটেল লেখা, অনলাইন সার্ভে, সাধারণ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (যদি আপনার বিশাল অনুসারী না থাকে), সাধারণ ডেটা এন্ট্রি, এনএফটি ফ্লিপিং এবং ড্রপশিপিং। এই কাজগুলো হয় AI নিজেই করে ফেলতে পারে, অথবা বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টেকা প্রায় অসম্ভব। তাই, এই ধরনের কাজের পেছনে সময় নষ্ট না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সহজ পথ (Easy): ৩ মাসে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়
যারা দ্রুত আয় শুরু করতে চান, তাদের জন্য কিছু সহজ পথ রয়েছে, যা শিখতে তিন মাসের বেশি সময় লাগে না। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় দিলেই এই দক্ষতাগুলো অর্জন করা সম্ভব। এর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো হলো:
-
শর্ট-ফর্ম ভিডিও এডিটিং: রিলস, শর্টস এবং টিকটকের যুগে এর চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া।
-
সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিপ্ট রাইটিং: আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরির জন্য ভালো স্ক্রিপ্ট লেখকের চাহিদা বাড়ছে।
-
এআই চ্যাটবট তৈরি: ছোট ছোট ব্যবসার জন্য AI চ্যাটবট তৈরি করে দেওয়া।
-
থাম্বনেইল ডিজাইন: ইউটিউব বা ফেসবুক ভিডিওর জন্য আকর্ষণীয় থাম্বনেইল ডিজাইন করা।
মধ্যম পথ (Moderate): ৮ মাসে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়
আপনি যদি আরও বেশি আয় করতে চান এবং সময় দিতে প্রস্তুত থাকেন, তবে কিছু মধ্যম মানের দক্ষতা আপনাকে একটি উচ্চ বেতনের চাকরি থেকেও বেশি আয় এনে দিতে পারে। এই দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করতে প্রায় আট মাস সময় লাগতে পারে।
-
এআই কনটেন্ট এজেন্সি: AI ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে দেওয়ার এজেন্সি।
-
অ্যাডভান্সড ভিডিও এডিটিং: মোশন গ্রাফিক্সসহ প্রিমিয়ার প্রো বা ডাভিঞ্চি রিজলভের মতো সফটওয়্যারে দক্ষতা অর্জন।
-
ওয়েব ডিজাইন: উইক্স বা ওয়েবসাইটের মতো টুল ব্যবহার করে ছোট ব্যবসার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা।
-
লিঙ্কডইন গ্রোথ এক্সপার্ট: AI টুল ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লিঙ্কডইন প্রোফাইল পরিচালনা করা।
-
গ্রাফিক ডিজাইন: সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ডিজাইন সাইকোলজি, রঙ এবং ফন্টের ব্যবহার শিখে আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা।
কঠিন পথ (Difficult): ২-৩ বছরে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়
যারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চান এবং একটি টেকসই ব্যবসা দাঁড় করাতে চান, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন কিন্তু অত্যন্ত লাভজনক কিছু পথ। এর জন্য প্রয়োজন হবে ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতা।
-
৩৬০-ডিগ্রি মার্কেটিং এজেন্সি: একটি প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সকল দিক (যেমন: এসইও, কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন) পরিচালনার এজেন্সি তৈরি করা।
-
প্রচলিত স্টার্টআপ: কোনো একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসা শুরু করা।
-
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং: ইউটিউব, লিঙ্কডইন বা ইন্সটাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে কনটেন্ট তৈরি করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনলাইনে সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র দক্ষতা বা ভাগ্যই যথেষ্ট নয়। সঠিক পথ বেছে নেওয়া, ধৈর্য ধরে দক্ষতা অর্জন করা এবং সময়ের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের পরিবর্তে মানসম্মত সমাধান প্রদান করার মানসিকতাই হবে ২০২৫ সালের সফল অনলাইন ক্যারিয়ারের মূল ভিত্তি। তাই, যেকোনো একটি বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাস লেগে থাকলেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া সম্ভব।



















