"সরকারে আসার পর আমি যেন বন্দি হয়ে গেছি, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না!"—এই কথাটি বলেছেন আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে গণমাধ্যম সংক্রান্ত এক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
"গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা" শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “অনেকেই বিভিন্ন অন্যায় তদবির নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি যদি না করি, বা না শুনি—তখনই গালাগাল শুরু হয়। কেউ কেউ তো সরাসরি বলে, আমি ভারতের দালাল!”
তিনি আরও যোগ করেন, “সরকারে এসেই আমি নিজেকে বন্দি মনে করছি। কখনো এতটা অসহায় লাগেনি। মনে হয়, চারপাশে যেন জাল বিছানো। যেখানে সত্য বলা বিপজ্জনক।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বর্তমানে প্রচুর মিথ্যা মামলা হচ্ছে। কেউ যদি মামলা দেয়, সেটা তো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমি বলবো—সংখ্যায় যতোটা মনে হয়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা এখনও খুব অস্বাভাবিক পর্যায়ে যায়নি।”
তবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, “সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে, দলাদলি আর গ্রুপিং চলতে থাকলে—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু স্বপ্নই থাকবে, বাস্তবে তা কখনো আসবে না।”
ড. নজরুল সবার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, “দলীয় বিভাজন বাদ দিন। দলকানা হয়ে নিজেরা মারামারি করলে মিডিয়া কখনোই শক্তিশালী হবে না। সাংবাদিকদের উচিত এখনই এক হওয়ার, নিজেদের অবস্থান মজবুত করার।”
তিনি বলেন, “আমি সরকারে থেকেও অনেক সময় কিছু করতে পারি না। আইন উপদেষ্টা হয়েও আমার সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু যদি সাংবাদিক সমাজ একত্রিত হয়, তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব।”
"কোন সমাজে সত্য বললেই 'বিদেশি দালাল' হয়ে যেতে হয়? সত্য বললেই কারও চক্ষুশূল হতে হয়? আমাদের দেশ কী সত্য বলার জায়গা রাখছে না?"
এই বক্তব্যে পরিস্কার, সরকারে থেকেও ড. আসিফ নজরুল আজ ‘বন্দিত্ব’ অনুভব করছেন—একটি সিস্টেমের মধ্যে থেকে, যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও এখন ‘অপরাধ’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুলের এই মন্তব্য শুধু একজন ব্যক্তি বা সাংবাদিকতার দুঃখ নয়—এটি আজকের বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটি প্রতিবিম্ব। প্রশ্ন হলো—এই অবস্থান থেকে দেশ কোথায় যাচ্ছে?